এক দশকের মধ্যে গম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায় ব্রাজিল

প্রকাশ: জুলাই ০৮, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

গম উৎপাদনে আগামী এক দশকের মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ খাদ্যশস্য উৎপাদক দেশ ব্রাজিল। এ লক্ষ্যে গমের আবাদ বাড়ানো, খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও নীতিগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস (এফএএস) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। খবর ওয়ার্ল্ড-গ্রেইন। 

ব্রাজিল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ খাদ্যশস্য উৎপাদক। দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি ভুট্টা ও সয়াবিন উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে গম উৎপাদন চাহিদার চেয়ে কম হওয়ায় সম্প্রতি সেদিকে নজর দিয়েছে দেশটির সরকার। 

বর্তমানে ব্রাজিল বিশ্বের শীর্ষ ১০ গম আমদানিকারক দেশের একটি। ২১ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিলে প্রতি বছর ১ কোটি ২০ টনের বেশি গম ও গমজাত খাদ্যপণ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে চলতি ২০২৪-২৫ বিপণন বর্ষে ৯৫ লাখ টন গম উৎপাদনের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ঘাটতি মেটাতে দেশটি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ব্রাজিল প্রায় ৮০ শতাংশ গম আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করে। 

এর আগে ২০০০ সালের দিকে ব্রাজিলের নিজস্ব গম উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ পূরণ করতে পারত। ২০২২-২৩ সালে এসে তা ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশটিতে গম উৎপাদন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেলেও এখনো কিছুটা ঘাটতি থেকে গেছে। 

এফএএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশটির কৃষকরা গম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তা সত্ত্বেও যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, তা-ই পূরণে উদ্যোগী হয়েছে দেশটির সরকার। 

ব্রাজিলের দক্ষিণের প্রদেশগুলো মূলত গম উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। এ অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া গম চাষের সহায়ক। এ প্রদেশগুলোয় ব্রাজিলের ৮০ শতাংশ গম উৎপাদন হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশটির সেরাডো বায়োম অঞ্চলের ৪০ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমিতে গম উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। মধ্য ব্রাজিলের এ অঞ্চলে বছরের অর্ধেক সময় খরা ও উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। সরকার এ বিপুল পরিমাণ জমিতে খরাসহিষ্ণু জাতের গম আবাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ জাতের এ বীজ উদ্ভাবনে কাজ করছে ব্রাজিলিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ করপোরেশন (ইএমবিআরএপিএ)। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জাত উন্নয়ন সম্পন্নও করে ফেলেছে সংস্থাটি। 

দেশটির কৃষকরাও ভুট্টা বা সয়াবিনের পর দ্বিতীয় ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন গম উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছেন। তবে জমি প্রস্তুত ও কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের উচ্চ ব্যয় এবং হুইট ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন তারা। ফলে অনেকেই সাশ্রয়ী ও কম ঝুঁকিপূর্ণ ফসল চাষে বিনিয়োগ করছেন।

তবে গম প্রক্রিয়াকরণের জন্য বৃহদাকার মিলের অভাবও সেরাডো অঞ্চলে গম চাষ বাড়ানোর অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। দেশটির মিনাস জেরাইস প্রদেশের মিলগুলো আট লাখ টন গম প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে এ সক্ষমতার মাত্র ২৫ শতাংশই ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। বন্দর সুবিধার কারণে ব্রাজিলের অধিকাংশ মিল দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত।

 এছাড়া উৎপাদন বেশি হওয়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলেও অনেক মিল হয়েছে।

এফএএস বলছে, ‘গমের বাজারে অন্যতম আমদানিকারক দেশ থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ব্রাজিল নিয়েছে, তার সাফল্য নির্ভর করছে দেশটির কৃষকের ওপর। সেরাডো বায়োম তারা যতটা সাফল্যের সঙ্গে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করবে, ততই গম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দিকে দেশটি এগিয়ে যেতে পারবে।’ এতে আরো বলা হয়, ‘ব্রাজিল এর আগে সয়াবিন ও ভুট্টা আমদানিকারক দেশ থেকে শীর্ষ রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। তাই গম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া নিয়েও আশাবাদী হওয়া যেতে পারে। এরই মধ্যে দেশটি গমের উপযুক্ত জাত উদ্ভাবন ও কৃষি উপকরণ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে।’ 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫