৭২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কাটেনি শিক্ষক ও আবাসন সংকট, রয়েছে সেশনজট

প্রকাশ: জুলাই ০৭, ২০২৪

আবু ছালেহ সোয়েব, রাবি

১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি গতকাল ৭২ বছরে পা দিয়েছে। মাত্র ১৬১ জন নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজারের অধিক। তবে প্রতিষ্ঠার সাত দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো রয়েছে আবাসন সংকট ও সেশনজট। রয়েছে শিক্ষক সংকটও।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৬ হাজার ৩৭০ জন। এর বিপরীতে ১৭টি হলে ৯ হাজার ৬৭৩ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেয়েছেন। বাকি ১৬ হাজার ৬৯৭ শিক্ষার্থী সে সুবিধা পাননি।

আবাসন সংকটে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, অতিরিক্ত ভাড়া ও নিরাপত্তাহীনতা তাদের ভোগান্তির প্রধান কারণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গার কোনো অভাব নেই। রয়েছে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব। শতভাগ আবাসিকতার নিশ্চয়ন চান তারা।

অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যাপীঠ হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত নেই। সৃষ্ট পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৪০০ শিক্ষকের পদ। শিক্ষক সংকটের কারণে বিভিন্ন বিভাগে পাঠ্যক্রম যথাযথ সম্পন্নও হচ্ছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান। এমনকি বিশ্ব প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগে যথেষ্ট শিক্ষক না থাকায় কাঙ্ক্ষিত পড়াশোনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত কোর্স-পরীক্ষা এবং ফল যেমন যথাসময়ে হচ্ছে না, তেমনি কার্যকার কোনো পড়াশোনা হচ্ছে না।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ অনুষদের ৬১ বিভাগের মধ্যে ৫০টির অধিক বিভাগেই রয়েছে সেশনজট। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা চার বছর শেষ করেও স্নাতক অর্জন করতে পারেননি।

শ্রেণীকক্ষ সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, বাংলা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগসহ আরো কয়েকটি বিভাগে পাঁচ থেকে ছয় ব্যাচের বিপরীতে দুই-তিনটি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। অধিকাংশ বিভাগে শিক্ষার্থীদের তুলনায় শ্রেণীকক্ষ কম। ফলে গাদাগাদি করেই ক্লাসে বসেন শিক্ষার্থীরা। ১২০ শিক্ষার্থীর জন্য একটি রুম বরাদ্দ। একজন আরেকজনের সঙ্গে ঘেঁষে বসতে হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষা ও গবেষণার যথোপযুক্ত পরিবেশ, মাদক, নিরাপদ পানি, মানহীন খাবার এবং মেডিকেল সেন্টারের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় যথেষ্ট উন্নতি হলেও কিছু জায়গায় এখনো আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির লক্ষ্যে সমস্যাগুলো নিয়ে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-গবেষণায় অনেক দূর এগিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিচ্ছে। তবে কিছুটা সংকট থাকবেই। শতভাগ নিশ্চিত করা তো সম্ভব নয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে সংকট নিরসনের।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫