এবার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা কোটাবিরোধীদের

প্রকাশ: জুলাই ০৭, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রয়োজনে হরতালের হুঁশিয়ারি

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরোধিতা করে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা, যা এরই মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকালও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন কোটাবিরোধীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সারা দেশে ‘‌বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। 

রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে গতকাল বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ ঘোষণা দেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রোববার বেলা ৩টা থেকে “‌বাংলা ব্লকেড” কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়; শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে এ কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’ 

দাবি আদায়ে প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়ে কোটা আন্দোলনের এ সংগঠক বলেন, ‘‌শিক্ষার্থী ও আদালতকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সরকার দায়িত্বহীন আচরণ করছে—নির্বাহী বিভাগ এর দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “কোটা থাকবে না।” তাহলে কোটা কেন আবার ফিরে এল? কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে? এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়,৷শিক্ষক-অভিভাবকদেরও এ আন্দোলনে নেমে আসতে হবে।’ 

এর আগে বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে পূ্র্বঘোষিত একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্যাডো, মুহসীন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হল মোড়, বকশীবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা প্রায় ১ ঘণ্টার মতো অবস্থান নিলে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। 

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে ওই এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দেন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা মুরাদপুর থেকে জিইসি যাওয়ার সিডিএ এভিনিউ সড়ক অবরোধ করেন। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বটতলা, শহীদ সালাম-বরকত হল, চৌরঙ্গী, ছাত্রী হল সড়ক হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভ করেন। 

এদিকে কোটা পদ্ধতি সংস্কার ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজ দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। জোটের সমন্বয়ক রাগীব নাঈমের স্বাক্ষর করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংবাদ সম্মেলনে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের অবস্থান ও আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবি করে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপিও। রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ—কোনো শ্রেণীতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না। মেধাভিত্তিক বৈষম্যহীন জাতি ও সমাজ বিনির্মাণ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো দমিয়ে রাখার পুরনো কৌশলে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এজন্য সাধারণ ছাত্রসমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’

আন্দোলনে বিএনপির এ সমর্থনের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজধানীতে গতকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‌আমরা কোটামুক্ত ব্যবস্থা রেখেছিলাম। এখন আদালত রায় দিয়েছেন, সরকারের দোষ কী? সরকার তো এটা করেনি। সরকারের এখানে করার কী আছে?’ 

কোটাবিরোধী আন্দোলন সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করায় ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিতর্ক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফকে বহিষ্কার করেছেন সংগঠনটির মডারেটর ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিবেটিং ক্লাবের মেসেঞ্জার গ্রুপে গতকাল বিকালে মোশাররফকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সারাফ আফ্রো মৌকে দায়িত্ব দেয়া হয়। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫