শূন্য কার্বন নিঃসরণ

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য পূরণে বাধা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

প্রকাশ: জুলাই ০৭, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্বন নিঃসরণ হার শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এ লক্ষ্য অর্জনে কোম্পানিগুলোর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বিকাশ। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

ক্লাউড পরিষেবা ও ডাটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। আর এআইনির্ভর কার্যক্রমের সঙ্গে এগুলো সম্পৃক্ত। বর্তমানে যেসব ডাটা সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলো পরিচালনায় বিদ্যুৎ বা জ্বালানির চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী। এটি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কার্বন নিঃসরণ বাড়াচ্ছে।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে গুগল জানায়, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার কোম্পানির কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যমাত্রার ওপর প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে এআই অবকাঠামোর একটি বড় অংশ ডাটা সেন্টার পরিচালনার কারণে ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানির গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণ হওয়া এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। বিশেষ করে এআইয়ের প্রভাব সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

গুগলের পর মাইক্রোসফটও একই কথা জানিয়েছে। কোম্পানিটি ওপেনএআই নির্মিত চ্যাটজিপিটির উন্নয়নে অর্থায়ন করছে। মার্কিন কোম্পানিটি জানায়, এআইয়ের বিকাশে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি ২০৩০ সাল নাগাদ শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রাকে প্রভাবিত করবে।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নেট জিরো কার্বন এমিশন লক্ষ্যমাত্রার জন্য এআই এখন বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এআই মডেলের প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডাটা সেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রচুর তথ্য সংরক্ষণ ও সেগুলো পর্যালোচনা করতে হয়। এ কাজের জন্য ডাটা সেন্টারে প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন এবং এখান থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৬ সাল নাগাদ ডাটা সেন্টারগুলোয় বিদ্যুতের ব্যবহার প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার টেরাওয়াটে উন্নীত হবে, যা পুরো জাপানের বিদ্যুৎ চাহিদার সমান।

অন্যদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেমিঅ্যানালাইসিস জানায়, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের সাড়ে ৪ শতাংশ ব্যবহৃত হবে ডাটা সেন্টারে। বিদ্যুতের পাশাপাশি পানির ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। এক জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২৭ সাল নাগাদ ডাটা সেন্টারে পানির ব্যবহার ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন কিউবিক মিটার ছাড়াবে। এ সমস্যা সমাধানে বর্তমানে কোম্পানিগুলো তাদের ডাটা সেন্টার তথা এআইয়ের বিকাশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এ শক্তির জোগান তিন গুণ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে এবং জলবায়ু রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে চাইছে।

অন্যদিকে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে মহাকাশে ডিজিটাল স্টোরেজ তৈরির কথা ভাবছে ইউরোপ। অ্যাডভান্সড স্পেস ক্লাউড ফর ইউরোপিয়ান নেট জিরো এমিশন অ্যান্ড ডাটা সভরেনটি শীর্ষক স্টাডিটি ১৬ মাস ধরে করা হয়েছে। স্টাডিটির পরিচালক ড্যামিয়েন ডুমেস্টিয়ার বলেন, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ডাটা সেন্টার তৈরির সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ফলাফল বেশ আশাব্যঞ্জক।

ইউরোপিয়ান কমিশনের অধীনে ২০ লাখ ইউরো (২১ লাখ ডলার) ব্যয়ে অ্যাসসেন্ড স্টাডি পরিচালনা করেছে থালেস অ্যালেনিয়া। সেখানে দাবি করা হয়, মহাকাশনির্ভর ডাটা সেন্টার তৈরি প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে সম্ভব। ডুমেস্টিয়ার সিএনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড্যামিয়েন ডুমেস্টিয়ার বলেন, সৌরশক্তি ব্যবহার করে কিছু ডাটা সেন্টার মহাকাশে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ভূপৃষ্ঠে থাকা ডাটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটা কমে আসবে।

ড্যানিশ ডাটা সেন্টার ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের স্ট্র্যাটেজি এবং অপারেশনের প্রধান মেরিমা জানিক বলেন, ‘এ খাতে প্রচুর তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে। এ চাহিদা সুনামির সঙ্গে তুলনীয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌সাধারণের তুলনায় এআই ডাটা সেন্টারে তিন গুণ বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তবে এর ব্যয় বা ব্যবহারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে বর্তমানে ডাটা সেন্টার কীভাবে তৈরি করা হবে এবং এর কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করতে হবে।’

গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার উঁচুতে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ডাটা সেন্টার স্থাপন করতে হবে, যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের তুলনায় তিন গুণ বেশি দূরে। ডুমেস্টিয়ার জানান, অ্যাসসেন্ড ক্লাউড পরিষেবা বাণিজ্যিকীকরণের অংশ হিসেবে ২০৩৬ সালে মোট ১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ১৩টি স্পেস ডাটা সেন্টার বিল্ডিং ব্লক স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫