বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ র ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তি উদযাপিত

প্রকাশ: জুলাই ০৬, ২০২৪

বণিক বার্তা অনলাইন

বেগম রোকেয়া রচিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’র ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তি উদযাপিত হয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের সহায়তায় এবং রংপুরের মনি শংকর স্মৃতি পাঠাগারের ব্যবস্থাপনায় রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রে ‘পায়রাবন্দ থেকে উলানবাটোর’: ‘সুলতানার স্বপ্ন’র আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়। 

গত ৮ মে মানবের ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি স্বরূপ ইউনেস্কোর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সভায় ‘বিশ্বস্মৃতি’ বা ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর আঞ্চলিক রেজিস্টারে বাংলাদেশ থেকে স্থান করে নেয় নারী জাগরণের অগ্রদূত, সমাজ সংষ্কারক ও লেখক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের শত বছর আগে লেখা ধ্রুপদী নারীবাদী কল্পকাহিনী ‘সুলতানার স্বপ্ন’। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। অতিথিদের মধ্যে আরো ছিলেন জাকির হোসেন সরকার এমপি; মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক; জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও প্রাবন্ধিক মিনার মনসুর; ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেক্টরের কর্মকর্তা নূরে জান্নাত প্রমা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুলতানার স্বপ্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব রব্বান জুয়েল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের উপস্থিত ছাত্রীরাই প্রমাণ করে যে সুলতানার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণের পরে অনেক নারী পারিবারিক ও সামাজিক চাপে যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে ও অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এটা একটা দেশের মানবসম্পদের অনেক অপচয়। বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ যা আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, তা বাস্তবায়নে নারীদের ঘরের বাইরের কাজে আরো যুক্ত হতে হবে।

পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে গান-কবিতা-বই পড়া-সাহিত্য চর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে জ্ঞান আহরণের নির্দেশ দেন। 

মিনার মনসুর বলেন, ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইটি এবং এর বক্তব্য আরো ছড়িয়ে দেয়া দরকার। নারীর ক্ষমতায়নে রাষ্ট্রের অনেক উদ্যোগ আছে। কিন্তু নারীর প্রতি সমাজের যে বৈরি মানসিকতা, তার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সব প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়ার লেখা, তার জীবনী সম্পর্কে আরো বেশি আলোচনা হওয়া দরকার।

ইউনেস্কোর মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমিটির সেক্রেটারি লিং এ্যাং এর লিখিত শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি নূরে জান্নাত প্রমা ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। বাংলাদেশ থেকে যে এটি দ্বিতীয় অন্তর্ভুক্তি তা উল্লেখ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বিশ্বস্মৃতির ভাণ্ডারে এ সংযুক্তি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। পুরো বিশ্ব এখন বাংলাদেশ ও ‘সুলতানার স্বপ্ন’ সম্পর্কে জানবে।

মফিদুল হক বলেন, ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গ্রন্থে যে শক্তি ও বার্তা আছে তা বিশ্বের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আঞ্চলিক রেজিস্টারে এর অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হয়েছে। বেগম রোকেয়া চাইতেন শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসুক। ওই সময়ে সৌরশক্তির ব্যবহার কীভাবে আমাদের জন্য উপযুক্ত হবে তা তিনি উল্লেখ করেছেন এ গল্পে। অথচ আমাদের দেশে মেয়েদের এখনো বাল্যবিবাহ হয়। পাশাপাশি তিনি পায়রাবন্দে অবস্থিত ‘বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র’ আবার শিক্ষা ও গবেষণার কাজে সচল হয়ে উঠুক এ আশা ব্যক্ত করেন। 

জাকির হোসেন সরকার বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান ঘিরে আরো উন্নয়ন, গবেষণা, মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান। 

অনুষ্ঠানে ৩ ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত সেরা ১১ জন শিক্ষার্থীর বই, পুরস্কার ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। এছাড়া কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সনদপত্র দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি



সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫