বিশ্বায়নের যুগে আমরা দরজা বন্ধ করে রাখতে পারি না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: জুলাই ০৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটের সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বায়নের যুগে আমরা নিজেদের দরজা বন্ধ করে রাখতে পারি না। আজকে পৃথিবীটা গ্লোবাল ভিলেজ, একের অপরের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই।

আজ বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে তিনি আরো বলেন, আমাদের ট্রান্স-এশিয়া হাইওয়ে, ট্রান্স-এশিয়া রেলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। আজকে ভারতকে আমরা ট্রানজিট দিলাম কেন? এটা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া। আমাদের ট্রানজিট তো আছেই। ত্রিপুরা থেকে বাস চলে আসে ঢাকায়, ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত তো যাচ্ছে। এতে ক্ষতিটা কি হচ্ছে। বরং আমরা রাস্তার ভাড়া পাচ্ছি। সুবিধা পাচ্ছে দেশের মানুষ। অনেকে অর্থ উপার্জনও করছে।

টানা চার বারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপাল, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ এই চারটি দেশ নিয়ে প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা নেপাল-ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট করেছি ভারতে। এটা তো কোনো একটা দেশ না, আঞ্চলিক ট্রানজিট সুবিধা এবং যোগাযোগ সুবিধার জন্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, নেপাল থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ কেনা শুরু করতে যাচ্ছি, সেখানে গ্রিড লাইন করা, আমরা সেই চুক্তি করেছি, সেটা আমরা শুরু করছি, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর যে সকল রেলপথ, নৌপথ যোগাযোগ বন্ধ ছিল সেগুলো আমরা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান থেকে একটি রাস্তা যাচ্ছে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত। অথচ সেই রাস্তাটা যাচ্ছে বাংলাদেশকে বাইপাস করে। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে যে রোড হচ্ছে তা থেকে বিচ্ছিন্ন, কেন আমরা বিচ্ছিন্ন থাকব। ভারত চাচ্ছিল ভুটান থেকে এই রাস্তাটা বাংলাদেশ হয়ে, ভারত হয়ে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড যাবে। আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ সব কিছু কত সুবিধা হতো। সেটাও খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছিল। আমি প্রথম বার সরকারে এসে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা যুক্ত হতে পারিনি।

ভারত থেকে পাইপ লাইনে তেল নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা আসামের রুমালিগড় থেকে পাইপলাইনে তেল নিয়ে এসেছি। পার্বতীপুর ডিপোতে সেই তেল আসছে। ক্ষতিটা কি হয়েছে। বরং আমরাই কিন্তু সস্তায় কিনতে পারছি। আমাদের দেশের জন্য, ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারি। উত্তরাঞ্চলে কোনো শিল্পায়ন হয়নি, এখন শিল্পায়নে আমরা যেতে পারি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও আমরা নির্মাণ করেছি। আমরা নিজেদের দরজা তো বন্ধ করে রাখতে পারি না। এটাই তো কথা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করছি। সামাজিক নিরাপত্তা, আবাসন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। গ্রাম ও শহরে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনসহ গ্রাম ও শহরে নতুন ১ লাখ গৃহনির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকায় বস্তিবাসীদের জন্য ফ্লাট নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করে বিনামূল্যে ঘর প্রদান এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আশ্রিতদের জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের সামাজিক মর্যাদা ও জীবন যাপনের মান বৃদ্ধি পেয়েছে। স্যানিটেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে।

সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া গৃহহীদের অনুভূতির ভিডিও চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অসহায় মানুষের কথাগুলো যখন শুনি তখন খুবই ভালো লাগে। মনে আমার বাবা এমন দেশই চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, আশ্রয়ণের পুনর্বাসিতদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পুনর্বাসিতদের আয়, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, খাদ্য বাবদ ব্যয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও সামাজিক অবস্থানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্রাপ্তির পর পুনর্বাসিত পরিবারের আয় প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘর প্রাপ্তির পূর্বে উপকারভোগীরা ২০১৭ সালে ২৪.৬৭ শতাংশ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করত যা ২০২২ সালে ঘর প্রাপ্তির পর ৯৪.৫০ শতাংশে এ উন্নীত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের খাদ্য বাবদ ব্যয় পূর্বের থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঋণ প্রদানসহ তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে এ সকল মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটে চলেছে। তাদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫