সরোজ খানের শেখানো নাচের মুদ্রা আজও অনুসরণ করে বলিউড

প্রকাশ: জুলাই ০৩, ২০২৪

সাবরিনা স্বর্ণা

বলিউড শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে যদি সুপারস্টার শাহরুখ খানের নাম নেয়া হয় তাহলে বোধকরি সেটি অত্যুক্তি হবে না। আর শাহরুখ মানেই যেন দুই বাহু বাড়িয়ে আলিঙ্গনের আহ্বান। অর্থাৎ তার সেই ‘সিগনেচার পোজ’। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বাজিগর’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে প্রথম শাহরুখের সিগনেচার পোজের দেখা মেলে। এর নেপথ্যে যার নাম রয়েছে তিনি বলিউডে ‘মাস্টারজি’ নামে খ্যাত। বলছি কিংবদন্তি নৃত্য নির্দেশক (কোরিওগ্রাফার) সরোজ খানের কথা, যিনি ওই গানের নৃত্য পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। ২০২০ সালের ৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সরোজ খান পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। কবির ভাষায় বললে, “সবাই চলিয়া যায়,—সকলের যেতে হয় ব’লে”। শুকনো পাতার মতো তিনি ঝরে গেলেও জীবন অগাধ। পৃথিবী তাকে স্মরণ করে আজও গানে গানে, নৃত্যের ছন্দে। আর এ বিষয়ে খুব কম মানুষই সন্দেহ প্রকাশ করবে যে গান ও নাচ ছাড়া বলিউডের সিনেমা নির্মাণ তো দূরের কথা, কল্পনা করাও সম্ভব নয়। কথিত আছে, সরোজ সফলতার শীর্ষে পৌঁছান শ্রীদেবী এবং নিজের নৃত্যকলা দিয়ে এখনো বলিউডে প্রভাব বিস্তারকারী মাধুরী দীক্ষিতের ওপর চিত্রায়িত গানের কোরিওগ্রাফ করে।

১৯৪৮ সালের ২২ নভেম্বর মুম্বাই শহরে জন্ম সরোজ খানের। ১৯৫০-এর দশকে মাত্র তিন বছর বয়সে শিশু নৃত্যশিল্পী হিসেবে বলিউডে যাত্রা শুরু করেন নির্মলা নাগপাল ওরফে সরোজ খান। তৎকালীন প্রখ্যাত কোরিওগ্রাফার বি সোহনলালের সঙ্গে তিনি কাজ করেন দীর্ঘদিন, শিখতেন নাচও। নাচের ছন্দ হৃদয়ে নাড়া দিলে সোহনলালের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কেও জড়ান সরোজ। তখন সরোজের বয়স সবে ১৩ বছর। কিশোরী সরোজ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার ৪১ বছর বয়সী মাস্টারজি সোহানলালকে বিয়ে করার। যদিও সরোজের অজানা ছিল যে সোহানলাল বিবাহিত এবং চার সন্তানের পিতা। মাত্র ১৪ বছরেই মা হয়েছিলেন সরোজ খান। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ১৭ বছর বয়সে সোহনলালের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় সরোজের। এরপর সন্তানদের নিয়ে শুরু হয় কিশোরী সরোজের লড়াই। বলা বাহুল্য, জীবনের সে লড়াই-ই তাকে বলিউডের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

১৯৭৪ সালে ‘গীতা মেরা নাম’ ছবি দিয়ে বলিউডের সিনেমায় কোরিওগ্রাফার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন সরোজ। তবে সফলতার শিখরে পৌঁছনোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় ১৩ বছর। ১৯৮৭ সালে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ সিনেমায় শ্রীদেবীর ওপর চিত্রায়িত ‘‌হাওয়া হাওয়াই’ গান ছিল সে সফলতার অন্যতম সিঁড়ি। এছাড়া ১৯৮৬ সালের ‘নাগিন’, ১৯৮৯ সালে ‘চাঁদনি’, ১৯৮৮ সালে ‘তেজাব’ ও ১৯৯০ সালে ‘থানেদার’ সিনেমায় কোরিয়াগ্রাফি তাকে উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। দর্শক তার কাজের মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হতে থাকে। যেমন দেবদাস সিনেমার ‘ডোলা রে’ গানে মাধুরী দীক্ষিত ও ঐশ্বরিয়া রাইয়ের নৃত্য দেখে মুগ্ধ না হওয়া মানুষের (সিনেমাপ্রেমী বিশেষত) সংখ্যা খুবই কম।

কেবল ক্ল্যাসিক নয়, ক্ল্যাসিক গানের কোরিওগ্রাফিতে রোমান্টিকতা মিশিয়ে বলিউডে তিনি নিয়ে আসেন নতুনত্ব।"‘ধক ধক করনে লাগা’ গানটির কোরিওগ্রাফি সে নতুনত্বের একটি অন্যতম উদাহরণ—আপনাকে এখনো প্রথম প্রেমে পড়ার লজ্জা ও ভয় মিশ্রিত অনুভূতি দিতে পারে।

‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘জব উই মেট’-এর মতো ছবির নাচের দৃশ্যসহ প্রায় দুই হাজার গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন তিনি। চার দশকের সুদীর্ঘ আলোকিত ক্যারিয়ার আর ৭১ বছরের জীবৎকালে হিন্দি সিনেমার বেশ কয়েকটি আইকনিক নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন। শ্রীদেবী থেকে মাধুরী দীক্ষিত, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন থেকে শুরু করে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ কিংবা কারিনা কাপুর খান, দিপীকা-আলিয়াসহ বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ভারতে তাকে ‘‌The mother of choreography’ বলা হয়। ‘ভরতনাট্যমের’ সব মুদ্রায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি ২০০৫-১০ সাল পর্যন্ত বেশকিছু টিভি রিয়ালিটি শোর বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জিতে নিয়েছেন কোরিওগ্রাফার হিসেবে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার। তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আটটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার তার ঝুলিতে। বর্তমানের স্বনামধন্য কোরিওগ্রাফার গীতা কাপুর ও ফারাহ খানও ছিলেন তার সান্নিধ্যে। একজন ‘সরোজ খানের’ শূন্যতা বলিউড হয়তো সর্বদাই বয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সরোজ খানের শেখানো নাচের মুদ্রা আজও অনুসরণ করে বলিউড।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫