প্রদর্শনী

‘দর্শকই ছবির ভালো শিরোনাম দিতে পারবে’

প্রকাশ: জুলাই ০৩, ২০২৪

ফারিহা আজমিন

গ্যালারি চিত্রকে চলছে প্রবীণ শিল্পী মিজানুর রহিমের একটি একক চিত্রপ্রদর্শনী। আয়োজনজুড়ে থাকছে শিল্পীর বেশকিছু ড্রয়িং, পেইন্টিং ও লিথোর নানা শিল্পকর্ম। আয়োজনটি দর্শকের জন্য মুক্ত করে দেয়া হয়েছে গত ২৯ জুন চিত্রকে এবং প্রদর্শনী চলবে ৯ জুলাই পর্যন্ত। নিজের আঁকা ছবি, করোনাকালীন বাধা পেরিয়ে প্রথমবারের মতো একক প্রদর্শনী সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে।

এ প্রদর্শনীতে থাকা ড্রয়িং ও পেইন্টিংয়ের পাশাপাশি দর্শকদের জন্য ভিন্ন ধারার আর্ট হিসেবে থাকছে লিথোগ্রাফি। লিথো মূলত একটি গ্রিক শব্দ। তেল ও জলের অমিলের ওপর ভিত্তি করে মুদ্রণের একটি প্ল্যানোগ্রাফিক পদ্ধতি হলো লিথোগ্রাফি বা লিথো আর্ট। এটি হতে পারে একটি পাথর বা একটি মসৃণ পৃষ্ঠসহ ধাতব প্লেটের ওপর করা কাজ। ১৭৯৬ সালে প্রথম লিথোগ্রাফি দেখা যায় জার্মান লেখক এবং অভিনেতা অ্যালোইস সেনিফেল্ডারের কাজে। সে থেকেই লিথো আর্টের শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। শিল্পী মিজানুর রহিম লিথোগ্রাফি শিখতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বেলজিয়ামে। সেখানে পাঁচ বছর (১৯৭৫-৮০ সাল) পর্যন্ত রয়েল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে লিথোগ্রাফি বা লিথো আর্ট শিখেছেন। প্রদর্শনীতে শিল্পীর মোট ১০ থেকে ১২টি লিথো আর্ট আছে। যার প্রায় সবই তিনি এঁকেছেন সাদা ও কালো রঙের মিশ্রণে। শিল্পীর চিত্রকর্মে এ দুই রঙের প্রাধান্য নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌আমার পছন্দের রঙ সাদা-কালো। তাই আমার বেশির ভাগ ছবিতেই খুব বেশি ভিন্ন রঙের ব্যবহার দেখা যায় না। এছাড়া প্রদর্শনীতে রয়েছে শিল্পীর সাতটি পেইন্টিং বলা যায় প্রায় বেশির ভাগই অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট। যে ছবিগুলোয় নীল, সবুজ ও কালো রঙেরই ছাপ বেশি লক্ষণীয়। তিনি বলেন, ‘আমি বিমূর্ত ছবিই এঁকেছি সবক’টি। এছাড়া আমি ছবি এঁকে আলদা নাম দিতে পছন্দ করি না। আমার কাছে মনে হয় আমি একটি ছবি আঁকলাম, দর্শক সে ছবির সামনে দাঁড়িয়ে, ছবিটি দেখে তার মনে যে ভাবনা আসবে তাই হবে সে ছবির নাম। এখানে আলাদা করে ছবির নাম দেয়ার কিছু নেই। দর্শক আরো ভালো শিরোনাম দিতে পারবেন ছবির। তবে নাম দিতে হয়, কারণ সবাই দেয়। সে অর্থেই আমার কিছু ছবির আলাদা নাম বা শিরোনাম আছে।’ 

১৯৬৩ সালে ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিল্পী মিজানুর রহিম শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত। ৪০ বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়েও ছবি আঁকিবুঁকির মাঝেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। তবে নানা বাধা পেরিয়ে প্রায় ৩০ বছর পর এবার তার একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে। তাই ভীষণ উৎসাহ নিয়ে কাজের মধ্য দিয়ে দর্শকের কাছে ফিরে আসতে পেরে আনন্দিত শিল্পী। তিনি মনে করেন, একজন শিল্পীর সার্থকতা তখনই, যখন তার আঁকা ছবি দর্শক গ্রহণ করবে। এ প্রদর্শনীতে শিল্পীর পুরনো-নতুন মিলিয়ে প্রায় ৭৬টি কাজ রয়েছে। তবে এর মধ্যে নতুন ছবির বেশির ভাগই অ্যাক্রেলিক রঙের ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে। আগের আঁকা ছবির বেশি ড্রয়িং ও লিথোগ্রাফ। এসব ছবির সবক’টিরই বিষয়বস্তু প্রকৃতি ও মানুষ। তবে প্রকাশ ভঙ্গিটি রিয়ালিস্টিং নয়, কিছুটা বিমূর্ত ছাপে আঁকা হয়েছে। যদিও প্রবীণ এ শিল্পীর দেশে সেভাবে একক প্রদর্শনীর সুযোগ হয়ে ওঠেনি, তবে বেলজিয়ামে লিথো আর্ট শেখার সময় তার বেশকিছু একক প্রদর্শনী হয়েছে।

এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে কেবল দর্শক ছবি দেখতেই নয়, সেখান থেকে ছবি ক্রয় করতেও পারবেন। সে ব্যবস্থাই রয়েছে। এ বিষয়ে শিল্পী বলেন, ‘‌আমার বেশ কয়েকটি ছবি বিক্রিও হয়েছে। তবে বর্ষার কারণে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো হলে আমি আশা করছি আরো বেশি দর্শকের সাড়া পাব। তবে যে কয়টি ছবি বিক্রি হয়েছে এতেও আমি ভীষণ খুশি।’  

এ আয়োজনে শিল্পী মিজানুর রহিমের পাশে ছিলেন বিশিষ্ট নগরবিদ, শিল্প সমালোচক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। যিনি প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেছেন এবং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী ও শিল্পী আব্দুল মান্নান। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী এ আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন। এছাড়া বন্ধু, সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে শিল্পী মিজানুর রহিমের এ আয়োজন বর্ণিল হয়ে উঠেছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫