ঝালকাঠির আটঘর নৌকার হাট

মূলধন সংকটে উদ্যোক্তারা

প্রকাশ: জুলাই ০১, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ঝালকাঠি

বর্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল থাকে পানিতে পরিপূর্ণ। এ সময় প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নৌকা। বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠির শত শত উদ্যোক্তার উপার্জনের পথ হয়েছে উন্মুক্ত। তবে উন্নত প্রশিক্ষণ ও মূলধনের অভাবে শিল্পটিকে এগিয়ে নিতে পারছেন না বলে দাবি করেন উদ্যোক্তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠিতে এমনও অঞ্চল রয়েছে, যেখানে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকার প্রয়োজন হয়। এছাড়া পেয়ারা, সবজি ও অন্যান্য ফসল বাজারে বিক্রির জন্যও নৌকা ব্যবহার করা হয়। ঝালকাঠির আটঘরে বসে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট। প্রতি শুক্রবার হাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হয় ছোট-বড় শত শত নৌকা। বর্ষা মৌসুমে শুরু হওয়া নৌকার হাট শরৎ পর্যন্ত জমজমাট থাকে। প্রতি মৌসুমে প্রায় ৫০ কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নৌকার কারিগর সালাম হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন নৌকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। আগে উপার্জন ভালো হলেও এখন কমে গেছে। আগে সবকিছুর দাম কম ছিল, নৌকাও বেশি বিক্রি হতো। এখন আর আগের মতো নৌকা বিক্রি হয় না। সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেলে এ শিল্প আর বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যাবে না।’

চাম্বুল, রেইনট্রি, কড়ই কাঠ দিয়ে তৈরি এসব নৌকার প্রতিটির দাম পড়ে ২-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আকার এবং গড়নভেদে এসব নৌকার দামও হয় ভিন্ন। এক কিংবা দুজন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নৌকার দাম এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এ ধরনের একটি নৌকা তৈরিতে একজন কারিগরের প্রায় দুদিন সময় লাগে। এ ধরনের একটি নৌকা বিক্রি করে ৩০০ টাকার বেশি লাভ হয় না। কাঠ, পেরেকসহ নৌকা তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হয় না বলে জানান নৌকা বিক্রি করতে আসা বিজন মিস্ত্রি।

তিনি জানান, ৮-১০ যাত্রীর ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি নৌকা তৈরি করে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা লাভ করা যায়। অবশ্য এ ধরনের নৌকা তৈরিতে সময় এবং শ্রম দুই-ই বেশি লাগে। মূলত ফসলের খেতে যাওয়া-আসা, মাছ ধরা, পেয়ারা তোলা, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত, হাটে সবজি বিক্রিসহ অন্যান্য কাজে এসব নৌকা ব্যবহৃত হয়। স্বল্পমূল্যের এসব নৌকার স্থায়িত্ব এক থেকে দুই মৌসুমের বেশি নয়।

বর্ষা মৌসুমে বৃহত্তর বরিশালে নৌকার চাহিদা থাকে বেশি। বছরের অন্যান্য সময় চাহিদা তুলনামূলক কম থাকলেও বর্ষা শুরুর সঙ্গে কারিগরদের ব্যস্ততাও বেড়ে যায়। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নৌকা সংগ্রহের জন্য খুচরা ক্রেতারা তো বটেই, পাইকারি ক্রেতারাও আটঘর হাটে আসেন। এখান থেকে নৌকা সংগ্রহ করে সরবরাহ করেন বিভিন্ন অঞ্চলে। ডোঙ্গা, পেনিস, বজরা, পানসি, ডিঙ্গি, ডিঙ্গা, ছিপ, কোষা নামে বাহারি নৌকা পাওয়া যায় এ হাটে।

আবদুল রশিদ নামে এক কারিগর বলেন, ‘সরকার অনেক শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করছে। তবে আমাদের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই করেনি। বিসিকের মাধ্যমে যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে নৌকা শিল্প টিকে থাকবে।’

আটঘর নৌকার হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা রাস্তার ওপর এবং খালে নৌকার আড়ত গড়ে তুলেছেন। এর পাশেই কারিগররা ব্যস্ত বেচাকেনায়। বাড়িতে নৌকা তৈরির পর একটির ওপর আরেকটি সাজিয়ে ট্রলারে করে বিক্রির জন্য আনা হচ্ছে।

নৌকা বিক্রেতা সোলেমান হোসেন জানান, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা আসেন আটঘর হাটে। প্রতি হাটে ৮-১০টি নৌকা বিক্রি করেন তিনি। এতে তার ২-৩ হাজার টাকা লাভ হয়।

নৌকার কারিগর সুখরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেশি। একটি নৌকা তৈরি করতে একজনের দুদিন সময় লাগে। সব খরচ বাদ দিলে ৫০০-১০০০ টাকা লাভ থাকে। এতে আমাদের পোষায় না।’

উদ্যোক্তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও মূলধনের অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠি বিসিক কর্মকর্তা মো. আল-আমিন। তিনি বলেন, ‘ঝালকাঠির ভিমরুলী ও স্বরূপকাঠির আটঘরে ভাসমান নৌকার হাট বসে। কয়েকশ উদ্যোক্তা নৌকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিসিকের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫