প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি

আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

প্রকাশ: জুলাই ০১, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর আগেও একই দাবিতে শিক্ষকরা অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা এ কর্মসূচির বাইরে ছিল। এবারের কর্মসূচিতে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষকরা বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা, যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসতে আগ্রহী, তারাও ভুক্তভোগী হবেন। কাজেই আমাদের এ আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষার পক্ষে এবং উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। আমরা এখনো আশা করি, সরকার অবিলম্বে এ যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যেন আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় ১ জুলাই থেকে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া। সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি মো. আখতারুল ইসলাম।

নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এই স্কিম বৈষম্যমূলক। সরকারের একটি গোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করে প্রত্যয় স্কিম চালু করিয়েছে। আমরা শিক্ষকরা আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই। আমরা বিভিন্নভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কোনো আগ্রহ দেখাননি। ফলে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো পথ ছিল না।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে গতকাল কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, ‘বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিমকে শিক্ষক সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এটি আমাদের অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের দিন। কিন্তু শিক্ষকদের ওপর প্রত্যয় স্কিম চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কোনো কর্মসূচিতে শিক্ষকরা যাবেন না।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন পর্যন্ত আলোচনার জন্য ডাকা হয়নি। প্রত্যয় স্কিম চরম অপরিপক্ব হাতের কাজ ও বিভ্রান্তিকর। এ স্কিম বাতিল করতে হবে। যারা প্রধানমন্ত্রীকে এ কুপরামর্শ দিয়েছে, তারা ষড়যন্ত্রকারী। আমরা নিজেদের সুবিধার জন্য আন্দোলন করছি না, আন্দোলন করছি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ক্রমাগত কমানো হচ্ছে। যেমন আমরা যখন চাকরি শুরু করি, তখন যোগদানের পরেই একটি ইনক্রিমেন্ট দেয়া হতো, এখন নেই। আগে পিএইচডি করলে ইনক্রিমেন্ট দেয়া হতো, এখন দেয়া হয় না। সেশন বেনিফিটও বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রচলিত পেনশন ব্যবস্থা থেকে বাদ দেয়া হলো। এসব কারণে আমরা মেধাবীদের বিসিএসসহ অন্য চাকরিতে ঝোঁক দেখতে পাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবেই না।’

গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি জানানো হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। এসব দাবি আদায়ে গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। ৩০ জুন পালন করেন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।

এদিকে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া নিয়ে আমি এ মুহূর্তে কিছু বলছি না। তারা একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এ অচলাবস্থা যদি আগামীকাল (সোমবার) থেকে শুরু হয়ে থাকে, তাহলে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা নেব। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাব আমরা।’  

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশনে যেতে কেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অনীহা প্রকাশ করছেন, সেটি তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে তুলনামূলক একটি চিত্র দেখিয়েছেন। আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ তাদের জানিয়েছি। সেগুলো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।’

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত করার সিদ্ধান্তটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়। এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। তাই সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫