অস্ট্রেলিয়া থেকে উলের সরবরাহ নিম্নমুখী

প্রকাশ: জুলাই ০১, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে উলের দাম কভিড-১৯ মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দেশটির উল ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন। এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে উলের সরবরাহ কমে গেছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অলাভজনক সংগঠন অস্ট্রেলিয়ান উল ইনোভেশনের (এডব্লিউআই) সিইও জন রবার্ট এসব তথ্য জানিয়েছেন। খবর নিক্কেই এশিয়া। 

চলতি মাসে অস্ট্রেলিয়ান উল এক্সচেঞ্জে প্রতি কিলোগ্রাম উল ১১ অস্ট্রেলিয়ান ডলারে বিক্রি হয়েছে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকেও উলের দাম ২০ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বেশি ছিল। 

জন রবার্ট বলেন, ‘উলের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা ভেড়া পালন অব্যাহত রাখবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তা করছেন। কৃষকরা তাদের মজুদকৃত উল বিক্রির পর আর ভেড়া পালন করছেন না। এমনকি তারা পেশা পরিবর্তন করে ফেলছেন। এটা উল ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো খবর নয়। একমাত্র উলের দাম বাড়ালে পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব।’

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষ উল উৎপাদক দেশগুলোর একটি। এডব্লিউআইয়ের মতে, বিশ্বজুড়ে ‘সুপারফাইন’ ধরনের উলের প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ করে দেশটি। ১৮ দশমিক ৫ মাইক্রনেরও কম ব্যাসার্ধের বিশেষ এ উল উচ্চ মানের পোশাক তৈরিতে ব্যবহার হয়। জন রবার্ট জানান, কাঁচামাল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মোট উল রফতানির ৮০ শতাংশ যায় চীনে। এরপর সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে আবারো রফতানি করা হয়। 

রবার্ট বলেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উলের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৬ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। মহামারী বিস্তারের জেরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে দাম কমে ৯ অস্ট্রেলিয়ান ডলারে নেমে আসে। যদিও ২০২১ সালে তা কিছুটা বেড়ে ১৪ ডলারে পৌঁছে। তবে পরবর্তী সময়ে তা আবার কমে যায়।’ 

তাছাড়া নিম্নমুখী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণেও উল ইন্ডাস্ট্রি হুমকির মুখে পড়েছে। কৃত্রিম তন্তুর তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় উলের ওপর আগ্রহ হারিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনাচরণ ও ফ্যাশনে পরিবর্তনও উলের চাহিদা কমার পেছনে ভূমিকা রাখছে। 

জাপান উলের অন্যতম আমদানিকারক। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বিপরীতে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের মান কমে গেছে। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে উল আমদানি কমেছে। 

তবে আগামী প্রজন্মের মাধ্যমে উলের বাজার পুনুরুজ্জীবিত হবে আশা করেন জন রবার্ট। তার মতে, এখনকার তরুণরা তাদের পোশাক কোন উপাদান দিয়ে তৈরি এবং সেটা পরিবেশবান্ধব কিনা তা জানতে চায়। 

উলমার্ক কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, উল দিয়ে ১০০টি সোয়েটার তৈরিতে পলিয়েস্টারের তুলনায় ১৮ শতাংশ কম জ্বালানি, তুলার চেয়ে ৭০ শতাংশ কম পানি ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে পেট্রকেমিক্যালভিত্তিক কৃত্রিম তন্তুর পরিবর্তে প্রাকৃতিক ও পচনশীল তন্তুর ব্যবহার বাড়াতে ক্যাম্পেইন করছে এডব্লিউআই ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। উল ছাড়াও তুলা, আলপাকা তন্তু, শণ ও সিল্ক নিয়ে ক্যাম্পেইন করছে তারা। 

এদিকে উল ইন্ডাস্ট্রিকে পুনরুজ্জীবিত করতে খেলাধুলার পোশাককে সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন রবার্ট। উলমার্ক কোম্পানি এরই মধ্যে কয়েকটি দলের জন্য ইউনিফর্ম তৈরি করছে। এছাড়া স্পোর্টস ব্র্যান্ড মিজুনো ও ডিসেন্টের সঙ্গেও কাজ করছে কোম্পানিটি। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের নাগরিকদের চাহিদার ওপর নজর রাখছে অস্ট্রেলিয়ার উল কোম্পানিগুলো। দক্ষিণ কোরিয়ার উদীয়মান ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিও অস্ট্রেলিয়ান উলের ক্রেতা হতে পারে। অন্যদিকে জাপানের বাজারে তরুণ প্রজন্মকে উল সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন রবার্ট। 

উল ব্যবসায় সুদিন ফেরাতে কোম্পানিগুলো ভিয়েতনাম, পর্তুগাল, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উল কারখানা স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫