সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর দিকে নজর আরব আমিরাতের

প্রকাশ: জুন ৩০, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জন্য বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি। এখানে রয়েছে ডিজিটাল দুনিয়া শাসন করা অ্যাপল, গুগল, মেটা ও ভিসার মতো নামি কোম্পানির দপ্তর। ধারণা করা হয়, ক্যালিফোর্নিয়ার অঞ্চলটির আজকের উদ্ভাবন বদলে দেবে আগামী দিনের বিশ্ব। এ কারণে সিলিকন ভ্যালিতে বিনিয়োগের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ-পরবর্তী দেশটির লক্ষ্যে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাত। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস।

একসময় জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন বৈচিত্র্যকরণ নীতির দিকে হাঁটছে ইউএই। এছাড়া নীতি সুবিধার কারণে দেশটিতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে বিভিন্ন দেশের বৈধ-অবৈধ অর্থ। ব্যাপক সংস্কারের কারণে দুবাই, আবুধাবির মতো শহরে পৌঁছে গেছে সর্বশেষ প্রযুক্তির সুবিধা। দেশটি শুধু পরিষেবা সুবিধাই নিচ্ছে না, বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে এসব খাতের নামি কোম্পানিগুলোয়। 

আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ বলছে, সিলিকন ভ্যালির সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রচেষ্টা তাদের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ নীতির একটি অংশ। এর মাধ্যমে মার্কিন বাজারে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে চায় দেশটি এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে চায় ইউএই।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো ও সিলিকন ভ্যালিতে সফর করেছেন ইউএইর বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি। এ সফরের লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো। বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তি খাতে অংশীদারত্ব বৃদ্ধি এতে গুরুত্ব পেয়েছে।

সফরে বাণিজ্য অংশীদার, নেতৃস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন ড. থানি বিন আহমেদ। এ সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং ও জলবায়ু প্রযুক্তির মতো হালনাগাদ ক্ষেত্রগুলোয় ইউএইর সম্ভাব্য অংশীদারত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।

বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং দেশটির বিনিয়োগবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশের রূপরেখা তুলে ধরেন ড. থানি বিন আহমেদ। প্রস্তারিত রূপরেখায় মার্কিন বিনিয়োগকারী, স্টার্টআপ ও দক্ষ পেশাদারদের তাদের কাজের সুযোগ অন্বেষণ করার আমন্ত্রণও জানান তিনি। এ সময় দুই দেশের মধ্যে যৌথ প্রকল্প, গবেষণা সহযোগিতা এবং এআই, ডাটা অ্যানালিটিকস ও টেকসই প্রযুক্তির মতো হালনাগাদ বিষয় ও দক্ষতার আদান-প্রদানের ওপর আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল হলো প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থল। সিলিকন ভ্যালির প্রাণবন্ত ইকোসিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অনেক কিছু অর্জন করতে হবে।’

তার মতে, এ সফর দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি খাত এবং একাডেমিক উভয় স্তরে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে। এর মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে দেশ দুটি। বিশেষ করে ইউএইর প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে গতিশীল করতে এ প্রচেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ড. থানি বিন আহমেদ বলেন, ‘প্রযুক্তি হলো আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণ এজেন্ডার একটি মূল স্তম্ভ। বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সূচকগুলোর সঙ্গে উৎপাদনশীল ও পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি অত্যাবশ্যক বিষয়।’

বাণিজ্যের দিক থেকে দেশ দুটির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ইউএইর তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরব আমিরাতের জ্বালানি তেলবহির্ভূত মোট বাণিজ্যের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়ে থাকে। বিপরীত দিক থেকে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হলো উপসাগরীয় দেশটি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আলোকে এ অঞ্চলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলবহির্ভূত বাণিজ্যের ২৭ শতাংশ ইউএইর সঙ্গে হয়ে থাকে।

বিনিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতেও দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের অংশীদারত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ হাজার ৮১০ কোটি ডলারেরও বেশি। ২০২২ সালের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, আরব দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা মোট বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) অর্ধেকেরও বেশির প্রতিনিধিত্ব করে এ অংক। এ বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন, ব্যবসায়িক পরিষেবা, সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা, আবাসন, খাদ্য ও পানীয় এবং মহাকাশ বিজ্ঞানের মতো অগ্রসর খাত।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫