স্বজনসহ এনবিআরের প্রথম সচিবের ৭০০ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

প্রকাশ: জুন ২৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮৭টি অবরুদ্ধের আদেশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালসহ তার ১৪ জন স্বজনের নামে সাত শতাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে পাওয়া এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সচিবসহ সাতজনের নামে থাকা ১৫টি সঞ্চয়পত্রে থাকা ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকাও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী আফসানাসহ চারজনের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক (অ্যাটাচ) করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজের আবেদনের পর দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে ২০০৫ সালের ২ জুলাই চাকরিতে যোগ দেন। তার বাড়ি খুলনার খানজাহান আলী থানায়।

২০২২ সালে অনুসন্ধানটি শুরু করে দুদক। তিন সদস্যের অনুসন্ধান দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলা। তার সঙ্গে রয়েছেন সহকারী পরিচালক সোমা হোড় ও মোস্তাফিজ। তদন্ত কাজটি অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ অনুবিভাগ এবং পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

দুদকের অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

জব্দ করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে ঢাকার ভাটারার বড় কাঁঠালদিয়া মৌজায় আবু মাহমুদ ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে সাড়ে সাত কাঠা জমি, পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে ২০০ দশমিক ১৭ বর্গমিটারের প্লট, আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ভাটারায় আড়াই কাঠা, খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া মৌজায় দশমিক ৪৫ শতাংশ ও রূপগঞ্জের তিন স্থানে জমি, আহম্মেদ আলীর নামে থাকা কার পার্কিংসহ ৩২২৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ায় ১০ কাঠা জমি রয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আবু মাহমুদ ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলী, শাশুড়ি মমতাজ বেগম, শ্যালক আফতাব আলী ও ভাই কাজী খালিদ হাসান।

অবরুদ্ধ অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দুটি সঞ্চয়পত্র, স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে চারটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ, আফতাব আলীর নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ, আহম্মেদ আলীর নামে তিনটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা রয়েছে।

ফয়সাল ছাড়াও যাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে তারা হলেন শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান।

আদালতের কাছে করা দুদকের আবেদনে বলা হয়, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার নিজ নাম ও স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পে মোট ২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে পাঁচ কাঠার প্লট কেনেন। অনুসন্ধান চলাকালে প্লটটি বিক্রি করে দেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হস্তান্তর/রূপান্তর করে নিজ নামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯০২ টাকা মূল্যের অধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড থেকে পাঁচ কাঠার প্লট কেনেন। এ প্লটের ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে মাহমুদা হাসানের ওয়ান ব্যাংক হিসাব থেকে। আদিবা ট্রেডিংয়ের (স্বত্বাধিকারী কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল) নামে থাকা শাহজালাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি চেকের মাধ্যমে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের নামে ১ কোটি টাকা ইস্যু করা হয়। তবে এ টাকা ফয়সালের হিসাব থেকে গেলেও সম্পদ কেনা হয় শ্বশুর আহম্মেদ আলীর নামে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ঘুস লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় তার নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদপূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ আনয়ন করে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরে এসব অর্থ রাখার জন্য এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, হজ ফাইন্যান্স এবং সর্বশেষ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় সাতশর অধিক হিসাব খোলেন। এসব হিসাব খোলা হয় আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী, শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের নামে। এর মাধ্যমে অবৈধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে আবু মাহমুদ ফয়সাল মানি লন্ডারিং অপরাধ করেছেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫