পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহ, ছয় দিনে পাঁচ শতাধিক মৃত্যু

প্রকাশ: জুন ২৭, ২০২৪

বণিক বার্তা অনলাইন

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। গত ছয়দিনে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একদিনেই উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় দেড়শো জনের লাশ। প্রতিটি ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ঠিক কী তা এখনই বলা সহজ নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে গরমের কারণে তারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা মুখে পড়েই তাদের মৃত্যু হয়েছে। করাচির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ওপরে রেকর্ড হয়েছে, সেখানে অনুভূত তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খবর বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে মৃতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। দেশটির ইধি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, তারা সাধারণত প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি মরদেহ করাচি শহরের মর্গে নিয়ে যায়। তবে গত ছয় দিনে তারা প্রায় ৫৬৮টি মরদেহ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র মঙ্গলবারই ১৪১টি মরদেহ সংগ্রহ করা হয়েছে।

করাচির সিভিল হাসপাতালে রোববার থেকে বুধবারের মধ্যে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ২৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. ইমরান সারওয়ার শেখ। এদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ডা. ইমরান সারওয়ার শেখ বিবিসিকে বলেন, আমরা যাদেরকে হাসপাতালে আসতে দেখছি তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৬০ থেকে ৭০ এর মধ্যে। তবে এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিল যাদের বয়স প্রায় ৪৫ বছর এবং এক দম্পতিও ছিল যাদের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে।

তিনি বলেন, যারা ঘরের বাইরে কাজ করছেন তাদের অনেকেই ডায়রিয়া বা তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার কারও কারও বমি হচ্ছে। লোকজনকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি যে এ তীব্র তাপমাত্রায় প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এবং হালকা কাপড় পরতে হবে।

মোহাম্মদ ইমরান নামের একজন রয়টার্সকে বলেন, আমার দিকে দেখো। আমার জামাকাপড় পুরোপুরি ঘামে ভিজে গেছে। ঠাণ্ডা থাকার জন্য তিনি বেশ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সাহায্যের প্রয়োজন আছে এমন সবাই হাসপাতালে পৌঁছাতেও পারেননি। অনেকে বাড়িতেই অসুস্থ হয়েই মারা গেছেন। 

ওয়াসিম আহমেদ নামের ৫৬ বছর বয়সী একজন নিরাপত্তা প্রহরী সবেমাত্র ১২ ঘণ্টার ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ি এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতাল নিয়ে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করে তাকে। ওয়াসিমের চাচাতো ভাই আদনান জাফর বিবিসিকে বলেন, তিনি দরজা দিয়ে এসে আমাকে বললেন, আমি এই গরম সহ্য করতে পারবো না। তারপর তিনি এক গ্লাস পানি চাইলেন। পানি খাওয়ার পরপরই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

সে সময় ওয়াশিমের পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তিনি ইতোমধ্যেই সম্ভবত হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আদনান জানিয়েছেন, ওয়াসিমের হার্টের অবস্থা ভালো ছিল না। তবে এর আগে তিনি কখনো গরমে এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েননি।

তাপমাত্রার এই অসহনীয় পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে রীতিমত লড়াই করে যাচ্ছে করাচির সাধারণ মানুষ। তাপমাত্রার এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে ফ্যান এবং এসি। কিন্তু নিয়মিত লোডশেডিংয়ের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে ফ্যান বা এসি চালানোও সম্ভব হচ্ছে না।

পাকিস্তানে লোডশেডিং একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে মুহম্মদ আমিন নামে এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মুহম্মদ আমিনের স্বজনরা জানিয়েছেন, তার ফ্ল্যাটে বার বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তিনি হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তার পরিবারের ধারণা তীব্র গরমের কারণেই এমনটা হয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫