সিপিডির সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশের জিআই স্বীকৃত ৮ পণ্যের দাবিদার ভারত

প্রকাশ: জুন ২৭, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ৩১টি জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের মধ্যে আটটির দাবিদার ভারত বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এছাড়া এমনও পণ্য আছে যেগুলো বাংলাদেশ জিআই হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি কিন্তু ভারত অলরেডি দিয়ে দিয়েছে। যেমন সুন্দরবনের মধুর একক অদ্বিতীয় দাবিদার ভারত। অথচ দেশটির চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি মধু বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে উৎপাদিত হয় বলে দাবি সিপিডির।

সংগঠনটির মতে, মধুর মতো দেশের অন্য সমজাতীয় পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেও ভৌগোলিক নির্দেশক স্বত্ব নেয়াটা অত্যন্ত জরুরি। এটি করতে না পারলে বাকি সমজাতীয় পণ্যগুলোর জিআইও ভারত নিয়ে নেবে। সুতরাং দ্রুত প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সমজাতীয় পণ্যগুলো নিয়ে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা প্রয়োজন।

গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিতসুন্দরবনের মধু এখন ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সম্মাননীয় ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের সমজাতীয় অনেক পণ্য ভারত তাদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জামালপুরের নকশিকাঁথা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাতি আম, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, ঢাকাই মসলিন, জামদানি শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত।

তিনি জানান, কোনো পণ্যের স্থানের নাম উল্লেখ না করে অথবা ভিন্ন স্থান দেখিয়েও পণ্যের নাম নির্ধারণ করেছে ভারত। যেমন জামালপুরের নকশিকাঁথাকে শুধু নকশিকাঁথা নামে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে দেশটি। এছাড়া মালদার ক্ষীরসাপাতি আম, মালদার ফজলি আম, বেঙ্গল মসলিন, উপাধ্যেয় জামদানি, বাংলার রসগোল্লা। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়ে বাংলাদেশের স্থানের নাম উল্লেখ করেও নিজেদের পণ্য বলে দাবি করেছে ভারত। যেমন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির স্বীকৃতি নিয়েছে বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি নামে। তাই অতিসত্বর জাতীয় কাঠামো, আন্তর্জাতিক কাঠামো ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের কাজ করা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুর একক অদ্বিতীয় দাবিদার ভারত। অথচ ভারতের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি মধু বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তা সত্ত্বেও মধু আমাদের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়নি। ২০১৭ সালেই বাগেরহাটের ডিসি মধুর জিআইয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন, যা এখনো কার্যকর হয়নি। ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দায় কে নেবে।

তিনি বলেন, ‘জিআই পণ্যের স্বীকৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি লক্ষ করা যায়। এটি দুর্বল কাঠামো গণতন্ত্রের ঘাটতির বহিঃপ্রকাশ। এখানে সক্ষম ব্যক্তির অভাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নজরদারি কাজ করে না। সেই সঙ্গে রয়েছে জবাবদিহিতার অভাব, ক্ষেত্রে প্রয়োজন দক্ষতা।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘ভৌগোলিক নির্দেশকের সঙ্গে এক শ্রেণীর পেশার মানুষও জড়িত রয়েছে। সুতরাং এটি শুধু ঐতিহ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের সঙ্গে সমজাতীয় পণ্যগুলোর জিআই স্বীকৃতি না দিলে বড় রকমের জটিলতায় পড়ব। কেননা তারা (ভারত) বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ফলে তাদের উৎপাদন বেশি হওয়ায় পণ্যগুলোর মূল্য কম হবে। সুতরাং একই পণ্য ভারত যখন কম মূল্যে ক্রেতাদের দেবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘একটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য আমাদের উচিত প্রো-অ্যাকটিভ হওয়া। নচেৎ মামলায় গড়াবে, যা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। যেখানে যুক্তিতর্কসহ নানা ধাপে এটি নিয়ে কাজ করতে হয়।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘একই পণ্য হওয়ায় শেয়ারড জিআই হলে উভয় দেশই উইন উইন অবস্থায় থাকতে পারে। এর পাশাপাশি কম্প্রিহেনসিভ যে চুক্তি হয়, সেখানে জিআই পণ্যকে যুক্ত করা যেতে পারে। সামনের দিনে এমন আরো অনেক সাংঘর্ষিক ইস্যু আসতে পারে। তাই নিয়ে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ এখনই নেয়া প্রয়োজন। 

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌলিক পণ্যগুলোর জিআই স্বত্ব নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন সুরক্ষা) আইন করে সরকার। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় পেটেন্ট, ডিজাইন ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) তাতে সাড়া দিয়ে ২০১৫ সালে প্রথম জামদানি শাড়ির জিআই স্বত্বের আবেদন জানায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও দুটি আবেদন জমা পড়ে। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে দেশের প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এরপর একে একে তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাতি আম, বিজয়পুরের সাদামাটি, জামদানি শাড়িসহ মোট ৩১টি পণ্য।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫