পণ্য লোড-আনলোড প্লাটফর্ম ব্যবহার করছেন না ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ: জুন ২৬, ২০২৪

আব্দুল কাদের, যশোর

ভারত থেকে রেলে পণ্য আমদানি শুরুর পর যশোর জংশনে লাইন সম্প্রসারণসহ লোড-আনলোড প্লাটফর্ম নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালে প্লাটফর্ম ও এটির পাশে যানবাহন চলাচলের রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়। তবে দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবহার হচ্ছে না প্লাটফর্মটি। কভিডের সময় সেখানে কোনো প্লাটফর্মই ছিল না, তখনো আমদানি পণ্য খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু প্লাটফর্ম নির্মাণসহ সংলগ্ন লাইনটির সম্প্রসারণ হলেও পণ্য ওঠানামা করছেন না ব্যবসায়ীরা। অব্যবহৃত পড়ে থাকায় প্লাটফর্মটি যানবাহনের স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কতগুলো কারণে প্লাটফর্মটি ব্যবহার করছেন না তারা। এর মধ্যে অন্যতম রেলপথে পণ্য আমদানিতে এখন অনেক ঝক্কিঝামেলা। একটি রেকে যত বগি থাকে, তার সব ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন ভারত থেকে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে না। এক্ষেত্রে সবক’টি বগি পূর্ণ হতে অনেক সময় চার-পাঁচদিন পর্যন্ত লেগে যায়। ট্রাকে করে পণ্য আনলে এখন এক-দুদিনের বেশি সময় লাগে না। এ কারণে ট্রেনে পণ্য আনায় আগ্রহ কমে গেছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, কভিডের সময় লোড-আনলোড প্লাটফর্ম ছিল না, তখনো তারা সেখানে পণ্য খালাস করেছেন। তখন স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়ে কাজটি করতেন। কিন্তু স্থানীয় এক ব্যক্তি রেলওয়ে বিভাগের কাছ থেকে প্লাটফর্মটিতে পণ্য খালাসে শ্রমিক সরবরাহের একটি স্যাংশন (বরাদ্দ) নিয়ে এসেছেন। এক্ষেত্রে এখন প্লাটফর্মটিতে পণ্য খালাস করতে হলে তার সরবরাহ করা শ্রমিক নিতে হবে। এতে শ্রমিক খরচ বেশি পড়ছে। এছাড়া ওই ব্যক্তির সরবরাহ করা শ্রমিক নিয়ে কাজ করানো ছাড়াও পণ্য খালাসে বগিপ্রতি তাকে ১ হাজার টাকা দিতে হবে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা প্লাটফর্মটি ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন না।

এ বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, লোড-আনলোড প্লাটফর্মে পণ্য রাখার জন্য শেড ও গুদামসহ আরো কিছু অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। এছাড়া ট্রাকে করে দুদিনের মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য বাংলাদেশে আনা যাচ্ছে। এসব কারণে তারা ট্রেনে পণ্য আমদানি ও প্লাটফর্মটিতে পণ্য খালাস করছেন না। বর্তমানে ট্রেনে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ওয়াগন ডিটেনশন খরচ অনেক বেশি। ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ট্রেনে পণ্য আমদানিতে অনাগ্রহ ব্যবসায়ীদের।

রেলওয়ের যশোর প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে রেলে পণ্য আমদানি শুরুর পর ব্যবসায়ীরা দাবি জানালে লাইন সম্প্রসারণসহ প্লাটফর্মটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে প্লাটফর্ম, এটির সংলগ্ন রাস্তা পুনর্নির্মাণ, রেললাইন সংম্প্রসারণ ও একটি শেড নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালে প্লাটফর্ম ও এর পাশে যানবাহন চলাচলের রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামো এবং রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। প্লাটফর্মটি পণ্য ওঠানামা করার জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি রেকে ৪০-৪২টি বগি থাকে। চার নম্বর লাইনটি সম্প্রসারণের আগে সেখানে ২০টির বেশি পণ্যবাহী বগি রাখা যেত না। এতে জংশনটির অন্যান্য রেললাইনে বগি রাখায় ক্রসিংয়ে সমস্যা হতো। সেই সঙ্গে পণ্য খালাসেও সময় বেশি লাগত। লাইনটি সম্প্রসারণের ফলে ওই লাইনে এখন ৪০টির বেশি বগি রাখা যায়। সেই সঙ্গে একই সময় বহুসংখ্যক বগি থেকে পণ্য আনলোড সম্ভব। মূলত পণ্য খালাস সহজ ও এ কাজে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্লাটফর্ম নির্মাণ এবং লাইন সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে যশোর রেলওয়ের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস জানান, ভারত থেকে পণ্য আমদানির ব্যাপারে একটি প্রকল্প চালু ছিল। সে সময় প্রচুর পরিমাণ আমদানি পণ্য যশোর জংশনে আনলোড হয়েছে। ডলার সংকটসহ অন্যান্য কারণে আমদানি বাণিজ্যে সংকট দেখা দিয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫