কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কারণ দেখিয়ে চলছে কর্মী ছাঁটাই

প্রকাশ: জুন ২৬, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা সাধারণত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যবসায়িক প্রতিকূলতার কারণ দেখিয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা বলেন। সম্প্রতি তারা নতুন একটি শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। তা হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সংক্ষেপে এআই।

কিছুদিন আগে কুরিয়ার সার্ভিস খাতের জায়ান্ট ইউপিএস তাদের প্রায় ১২ হাজার দাপ্তরিক পদ বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেয়। কোম্পানিটি মনে করছে, এসব পদের কাজ এআই করতে পারবে। টেক জায়ান্ট গুগলও তাদের বিজ্ঞাপন বিভাগের কিছু কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। কেননা নতুন একটি এআই ভোক্তাদের ক্যাম্পেইনে সাহায্য করছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে ছাঁটাইয়ের এমন অনেক নজির অনায়াসেই হাজির করা যায়। ফলে এআই যে চাকরির বাজারে খড়্গ চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এমন ধারণা সুপ্রোথিত। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি সত্যি এমন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এআইয়ের কারণে আসলেই কতটা চাকরিচ্যুতি ঘটনা ঘটে, তা কোম্পানিগুলো সামনে আনতে চায় না। কেননা এতে তারা জনগণের দুয়োর মুখে পড়তে পারে। অদূরভবিষ্যতে এআইয়ের কারণে গণচাকরিচ্যুতি অসম্ভব কিছু নয়। গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস বলছে, এ কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরি প্রতিস্থাপিত হতে পারে। কর্মক্ষেত্রের ওপর এআইয়ের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন কিংস কলেজ লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক ড্যানিয়েল সাসকিন্ড। তার মতে, ‘এখনো সে সময় আসেনি।’

বেশকিছু কারণে এখনো এআইয়ের ব্যাপক ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যয়বহুল এ প্রযুক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটাই বুঝে উঠতে পারেনি। তাছাড়া বোস্টন কনসালটিং গ্রুপ বলেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান এআইয়ের ‘ভয়ংকর’ অশুদ্ধ তথ্য নিয়েও শঙ্কার মধ্যে আছে। অবস্থা যদি এমনই হয়, তাহলে ছাঁটাইয়ের সময় কেন এআইয়ের দোহাই দেয়া হয়?

বিশ্লেষকদের মন্তব্য, এটা নিছক চাতুরতা। যুক্তরাজ্যের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইরিন লিং জানান, ছাঁটাইয়ের ঘটনাগুলো মূলত অর্থনৈতিক অবনমন, ব্যবসা পরিস্থিতির অবনতি কিংবা অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ঘটে। এগুলো আড়াল করতেই এআইকে বলির পাঁঠা বানানো হয়।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক গ্রেস লর্ডান বলেন, পাবলিক কোম্পানিগুলোয় ছাঁটাই হয় অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে। এক্ষেত্রে নিজেদের খালি কোষাগারের খবর বাইরে আনার চেয়ে এআইকে সামনে আনা বেশি ‘সম্মানজনক’, যাতে একে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়।’

ইউপিএস বা গুগলের ক্ষেত্রে এটাই ঘটে থাকতে পারে। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিটে ইউপিএসের শেয়ারের দাম কমে গেছে। আবার প্রতিষ্ঠানটির প্যাকেজ ডেলিভারির সংখ্যাও পড়তির দিকে। এমন অবস্থায় এআইকে সামনে এনে মান বাঁচানোর চেষ্টা করেছে কোম্পানিটি। একইভাবে গুগলও প্রযুক্তি বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা কমাতে চায়নি। ফলে তারাও একই রাস্তায় হেঁটেছে।

তবে ছাঁটাইয়ের ফলে বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে এআইয়ের উন্নয়নের সুযোগ আছে। শুধু এ কারণেই এআইয়ের ফলে ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এ পরিস্থিতিও ভয় পাওয়ার মতো পর্যায়ে যায়নি। বরং এ ধরনের ঘটনাও রঙচঙ মাখিয়ে প্রচার করা হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। 

এআই গবেষক অক্সেফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ কার্ল বেনেডিক্ট ফ্রে বলছেন, এআইকে এখনো প্রম্পট লিখে নির্দেশনা দিতে হয় এবং ফলাফলের মান যাচাই করতে হয়। আর এ প্রক্রিয়ায় সবসময়ই মানুষের প্রয়োজন। তাই জেনেরেটিভ এআই এখনই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির বিকল্প হয়ে উঠছে না। 

তবে মুদ্রার অন্য একটি দিকও আছে। এআই একজন আনাড়িকেও দক্ষ পেশাজীবীতে রূপান্তর করে ফেলার সক্ষমতা রাখে। একে বলা হয় ‘উবার ইফেক্ট’। 

ফ্রে এআইয়ের ‘উবার ইফেক্টে’র সমর্থনকারীদের একজন। তিনি বলেন, ‘‌চাকরিচ্যুতির পরিবর্তে এআই বরং পদোন্নতিতে সহায়তা করতে পারে। কেননা সব প্রতিষ্ঠানেই দক্ষ পরিষেবা দেয়ার মতো লোকবলের অভাব। এক্ষেত্রে এআই একটি সহযোগী শক্তি হয়ে উঠতে পারে।’

এআই আমাদের এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে চাকরিপ্রত্যাশীদের উচিত নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করা। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এআইকে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে না লাগিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে ব্যবহার করছে, তাদের কর প্রণোদনা বাতিল করা উচিত বলে মনে করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিওনার্দো সাসকিন্ড।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫