কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমায় ১৫ স্থানে ভাঙন

প্রকাশ: জুন ২৫, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া

বগুড়ায় যমুনা নদীতে তিন স্থানে ভাঙন

বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামে তীব্র হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ দুধকুমারের ভাঙন। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, এসব নদ-নদীর ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে সরজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকার সংখ্যা আরো বেশি বলে দেখা গেছে। গত এক সপ্তাহে নদ-নদীর এসব পয়েন্টে ভাঙনে অন্তত দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি, গাছপালা সরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে বগুড়ায় বন্যার আগেই ভাঙতে শুরু করেছে যমুনা।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারি বৃষ্টি উজানের ঢলে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে রৌমারী উপজেলার সোনাপুর, উলিপুরের বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি চিলমারী উপজেলার শাখাহাতিসহ অন্তত ১০টি এলাকা। অন্যদিকে ধরলার ভাঙনের কবলে পড়েছে সদরের আরাজী পলাশবাড়ী, মোগলবাসার চরসিতাইঝাড়, রাজারহাটের ছিনাই, হলোখানার চর সারডোবসহ ছয়টি এলাকা।

এছাড়া তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ক্লিনিকপাড়া, বিদ্যানন্দের কালীরমেলাসহ একাধিক এলাকায়। পাশাপাশি কয়েক এলাকায় পাড় ভাঙছে দুধকুমার।

রৌমারী উপজেলার সোনাপুরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের শিকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। ঘর-বাড়ি সরিয়ে অন্যের জায়গায় রেখে অন্যের বাড়িতে দিনযাপন করছি।

সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের চরসিতাইঝাড় এলাকার আছমা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে সব শেষ। এখন কোথায় যাব তার কোনো উপায় নেই।

সদর উপজেলার চর সারডোব এলাকার নোলা মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ধরলার ভাঙন চলছে। ভাঙন বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নাই। এখন কোথায় যাব, তারও কোনো দিশা নাই। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, নদ-নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের আট/নয়টি পয়েন্ট, তিস্তার তিনটি পয়েন্টসহ দুধকুমারের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় সাতটি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে কাজ চলছে। বাকি পয়েন্টগুলোর কথাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এদিকে বগুড়ায় বন্যা শুরু না হলেও যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বাড়ার পর কমতে থাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার শিমুলতাইড়, ইছামারা বোহাইল ইউনিয়নের শংকরপুর চরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া নদী এলাকার আশপাশের বেশকিছু কৃষিজমি বসতবাড়ি যমুনার ঘূর্ণি ঢেউয়ে ভেঙে যাচ্ছে।

পাউবো বগুড়া সূত্রে জানা যায়, ২১ জুন থেকে যমুনায় হঠাৎ পানি বাড়তে শুরু করে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার এক মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২১ জুন বেলা ৩টায় সারিয়াকান্দি মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ২৩ মিটার। উপজেলায় নদীর পানির বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। ২৩ জুন থেকে পানি কমতে শুরু করে। রোববার বিকাল ৩টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ৯৭ মিটার। গতকাল ছিল ১৪ দশমিক ৬০ মিটার। পানি কমতে থাকায় নদী এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

শিমুলতাইড় ছেড়ে বেশকিছু বাসিন্দা অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গোদাখালী গ্রামে যমুনার ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এলাকার ৫০ বিঘার বেশি কৃষিজমি যমুনাগর্ভে চলে গেছে। একই এলাকায় যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের প্রায় ২০ মিটার জিও ব্যাগ ধসে গেছে। এতে ভাঙন হুমকিতে রয়েছে ইছামারা গোদাখালীর ৩০০টির বেশি পরিবার।

বোহাইল ইউনিয়নের শংকরপুর চরে যমুনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সেখানে কয়েকদিনে যমুনার ভাঙনে বেশকিছু কৃষিজমি ভেঙে গেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজাহার আলী জানান, ইছামারা গ্রামের যেখানে পাউবোর নদী তীর সংরক্ষণকাজ শুরু হয়েছে, তার ভাটিতে যমুনার ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছে পাউবো।

বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত) সাখাওয়াত হোসেন জানান, উজানে যদি আরো ভারি বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে পানি বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকবে। উপজেলার যেখানেই নদীভাঙনের খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫