কালো টাকা সাদা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ বিরোধীদের

প্রকাশ: জুন ২৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজেটে ১৫ শতাংশ  ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, এতে সাধারণ সৎ ট্যাক্স দাতারা ক্ষুন্ন হবেন এবং ট্যাক্স দিতে চাইবেন না। যা দেশে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা। 

প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কোনো আশার বাণী নেই। বরং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে নিয়মিত ট্যাক্স দাতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর যারা কর দেননি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বৈধ পথে সকলেই ৩০-৩৫ শতাংশ ট্যক্স দেন। আর যারা দীর্ঘদিন ট্যাক্স দেননি, সেই কালো টাকা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করে ফেলবেন। তাহলে কেন সাধারণ মানুষ নিয়মিত ট্যাক্স দেবে ? এটা অনৈতিক, এর ফলে বহু মানুষ ট্যাক্স না দিয়ে এই সুযোগ নিবে।

 এ সময় তিনি মূল্যস্ফীতির জন্য সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা বলেন। তিনি বলেন,  রেমিটেন্স আমাদের অর্থনীতির একটা বড় চালিকা শক্তি। প্রায় ১ কোটি মানুষ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠায়। তার মধ্যে মালয়েশিয়া নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে, তারা প্রতি মাসে ৪ হাজার কোটি টাকা, বছরে ৫১ হাজার কোটি পাঠান। অনেকে মনে করে এত টাকা কেন আসবে, এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এ নিয়ে সিণ্ডিকেটও রয়েছে। ফলে রেমিটেন্স পাঠাতে তাদের সমস্যাও হচ্ছে, সেখানে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। তাই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অর্থ পাঠানো সুবিধা  দেবার এবং ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি অর্থ পাচার ব্যাংক ডাকাতি ইত্যাদি বন্ধের দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে উচ্চবিত্তদের সুবিধা রাখা হয়েছে। আর মধ্যবিত্তরা চাপের মধ্যে পড়বেন। বাজেটের বিভিন্ন নীতি গরীরদের পক্ষে যায়নি। তিনি বলেন, সিগারেটের দাম তেমন না বাড়ানোয় সরকারের আয় কমে যাবে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার সরকারের দায়িত্ব, কিন্তু সব খানেই দুর্নীতি, যদিও বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। মেগা প্রকল্প ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তার বিশাল অংশ বাইরের ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়াররা নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে তরুণ সমাজকে এ বিষয়ে দক্ষ করতে হবে।  কালো টাকা সাদা করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তার সমালোচনা করে তিনি বলেন এর ফলে সাধারণ করদাতারা কর দিতে চাইবে না। তাই ওই প্রম্তাব থেকে সরে আসতে হবে।

দেশের অর্থ বিদেশে পাঁচার করেছে, তাদের চিহ্নিত করে অর্থ ফেরৎ ও তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। তিনি পার্লামেন্ট কিভাবে কালো টাকা সাদা করা সুযোগ দেয় তার সমালোচনা করেন। 

আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দীন বলেন, সম্প্রতি সঙ্কটগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, এই  ব্যাংকগুলোকে  সলভেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কার্যকারী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বিধায় এই সঙ্কটগ্রস্ত ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গ্রাহকরা তাদের সব টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এই  সিদ্ধান্তের নিন্দা জানা তিনি।

তিনি বলেন,  দেশে উন্নয়ন দ্রুত গতিতে চলছে, কিন্তু তাতে সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি বেড়ে গেছে এর লাগাম টানা যদি না যায় তাহলে উন্নয়নের গতি হ্রাস পাবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫