ভোলায় রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব, জনমনে আতঙ্ক

প্রকাশ: জুন ২২, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ভোলা

পাঁচদিনে দেখা মিলল ১২টির

ভোলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়েছে। গত পাঁচদিনে জেলার কয়েকটি স্থান থেকে ১২টি সাপ উদ্ধার হয়েছে। অধিকাংশ সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেললেও একটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সদর উপজেলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে সাপ উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, রাসেলস ভাইপারের দংশন থেকে কৃষককে বাঁচতে হলে গামবুট ব্যবহার করতে হবে। সাপ দংশন করলে ওঝার শরণাপন্ন না হয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম আছে।

রাসেলস ভাইপারকে সাধারণত বাংলায় ডাকা হয় চন্দ্রবোড়া নামে। ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে দেশে মহাবিপন্ন গোত্রভুক্ত করা হয়। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তবে এক দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে রাসেলস ভাইপার। এ সাপের ছোবলে বেড়েছে মৃত্যুও। বাংলাদেশে আগে থেকে রাসেলস ভাইপারের অস্তিত্ব ছিল। তবে ২০১০ সালের দিকে বন্যার পানিতে গঙ্গা-পদ্মা হয়ে ভেসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহারসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে এ বিষধর সাপ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পদ্মার মধ্যবর্তী চরাঞ্চল ও তীরবর্তী লোকালয়ের প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটারের মধ্যে এদের বিচরণ। 

তবে বন্যার সময় সাপটি মূল পদ্মা নদী, উপনদী, ছোট ছোট শাখা নদী, খাল-বিল ও বড় বড় ড্রেনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, ২০ জুন সকালে সদর উপজেলার শিবপুরে চায়না ইপিজেড বালির মাঠে স্থানীয়রা দেখতে পান একটি রাসেলস ভাইপার। পরে তারা সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এর আগে তজুমদ্দিনের সোনাপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ির সামনে ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়। এছাড়া ১৯ জুন বিকালে তজুমদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠে দেখা মেলে এ সাপের। এর আগে ১৮ জুন সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউনিয়নে পাকার মাথায় বাড়ির পাশের জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়। দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর থেকেও একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়। এর আগে ১৬ জুন লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদে একটি বাড়ির শৌচাগারে সাপটি দেখা যায়। এছাড়া মনপুরা ও চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরো পাঁচটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তবে তজুমদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল মাঝি বলেন, ‘নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালির মধ্যে একটি রাসেলস ভাইপার দেখতে পেয়েছিলাম। এমন সাপ এর আগে আর কখনো দেখিনি। সাপটি দেখতেও ভয়ানক। অন্য সাপের চেয়ে দেখতে অনেকটাই আলাদা। পরে সাপটি স্থানীয়রা মেরে ফেলে।’

তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া জানান, তার ঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে উপস্থিত লোকজন।

যদিও এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতার পাশাপাশি প্রতিকারে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

সিভিল সার্জন ডা. একেএম শফিকুজ্জামান, ‘রাসেলস ভাইপার বিষধর সাপ। এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হয়। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫