বাজেট প্রতিক্রিয়া

কৃষি খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল ভর্তুকি হ্রাস অযৌক্তিক

প্রকাশ: জুন ২২, ২০২৪

ড. জাহাঙ্গীর আলম

সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংসদে নয়া বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি তার প্রথম বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের এটি ২৫তম ও বাংলাদেশের ৫৪তম বাজেট। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ২১তম বাজেট এটি। এ সরকারের আমলে বাজেটের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট বাজেটের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। ১৫ বছর পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা ৬২১ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকায়। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত নয়া বাজেট ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এ বাজেটের আকার হচ্ছে জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত নয়া বাজেট ওই বাজেট থেকে ১ হাজার ১৪ গুণ বেশি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাজেট দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। তার প্রধান কারণ, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আহরণে ঝুঁকি। এবারের বাজেট অনেকটা সংকোচনমূলক। এতে কৃচ্ছ্রসাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যান্য বছর ১২-১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয় বাজেটে। এবার তা মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশ ধরে নিলে বাজেটের প্রবৃদ্ধি হবে নেতিবাচক। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনায় নিলে অযৌক্তিক ব্যয় কমানোর মাধ্যমে একটি আঁটসাঁট বাজেট প্রস্তাবই এবার কাঙ্ক্ষিত ছিল। বাজেট বাস্তবায়নের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হলে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বর্তমান চড়া মূল্যস্ফীতি অবদমনে প্রস্তাবিত বাজেট সহায়ক হবে। 

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর উৎস  থেকে আসবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হতে হবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ১৩ দশমিক ৫৮ এবং মূল লক্ষ্যমাত্রার ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সাম্প্রতিক আর্থিক সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন খুবই কঠিন হবে। কর, ভ্যাটের আওতা ও হার বৃদ্ধি এবং করছাড়ের মাত্রা হ্রাসের কারণে মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। তবে এ চাপ জনগণকে সহ্য করতে হবে। বর্তমানে আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ৮ শতাংশের নিচে। এটি এশিয়ার সর্বনিম্ন। ক্রমাগত বাজেট ঘাটতি হ্রাস এবং দেশী ও বিদেশী ঋণের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য কর-জিডিপির অনুপাত বাড়িয়ে ন্যূনপক্ষে ২০ শতাংশে উন্নীত করা দরকার।

গত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা নামিয়ে দেয়া হয় ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। সংশোধিত বাজেটে আরো নামিয়ে করা হয় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রাথমিক হিসাবে অর্জনের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রাক্কলন হলো ৫ দশমিক ৬ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে আগামী বাজেট বাস্তবায়নের হার ও গুণগত মান সন্তোষজনক না হলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বাস্তবে এটা হয়তো আরো বেশি হবে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। গত মে মাসে ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, এপ্রিলে ৯ দশমিক ৭৪ এবং গত ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু তা অর্জন সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদনে মন্থর গতি, ডলার সংকট ও জ্বালানি সংকটের কারণে মূলত এই মূল্যস্ফীতি। তদুপরি চলতি বাজেটের বিশাল ঘাটতি মেটাতে সরকারকে বড় আকারের ঋণ গ্রহণের জন্য নির্ভর করতে হয়েছে ব্যাংক খাতের ওপর। তাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ছে। অর্জিত হচ্ছে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না কাঙ্ক্ষিত হারে। বিনিয়োগও তেমন বেশি বাড়ছে না। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে সরকারি খরচের গুণগত মান। এবার বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে মূলত বৃহত্তর কৃষিতে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে। এ খাতগুলোয় গত বছরের মূল বাজেটের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ার হার যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩১, ৬ দশমিক ৭৪, ৮ দশমিক ১২ এবং ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যান্য খাতে বাজেটের প্রবৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত কম।

আগামী অর্থবছরে কৃষিবিষয়ক পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। এ টাকা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে শস্য কৃষি খাতের জন্য রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। বাকি ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বন ও পরিবেশ, ভূমি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এটা  অপ্রতুল। দিনের পর দিন বাজেটে বৃহত্তর কৃষি খাতের হিস্যা হ্রাস পেয়েছে। ২০১১-১২ সালে বৃহত্তর কৃষি খাতের হিস্যা ছিল মোট বাজেটের ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তা নেমে এসেছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে। ফসল খাতে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। ভর্তুকি হ্রাস অযৌক্তিক। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত নয়া বাজেটে বৃহত্তর কৃষি খাতের বরাদ্দ ৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে গেছে।

উপখাত ওয়ারি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফসল খাতের বারাদ্দ গত বছরের মূল বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। তবে সংশোধিত বাজেট থেকে ৬ হাজার ৬১ কোটি বা ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ কম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, ভূমি, পরিবেশ ও বন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ গত বছরের মূল বাজেট অপেক্ষা যথাক্রমে ১ দশমিক ১৩, ১ দশমিক ৮৭, ৩০ ও ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সংশোধিত বাজেট অপেক্ষা পানিসম্পদ মন্ত্রণায়ের বাজেট ২৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে। বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

গত বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফসল খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ৮ হাজার ১১১ কোটি টাকা যোগ করে সংশোধিত বাজেটে তা নির্ধারণ করা হয় ২৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। এবার নয়া বাজেটে কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, যা গত বছরের মূল বাজেট থেকে ২৭২ কোটি টাকা কম। সংশোধিত বাজেট থেকে তা ৮ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা কম। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ও কৃষি যন্ত্রের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভর্তুকি হ্রাস অনাকাঙ্ক্ষিত। তাতে বিঘ্নিত হবে কৃষির উৎপাদন। খাদ্যনিরাপত্তা ব্যাহত হবে। বন, জার্মানি থেকে প্রকাশিত গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৪ বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম সারির খাদ্যনিরাপত্তাহীন ১০টি দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানে রেখেছে। বিবিএসের তথ্যানুসারে দেশের প্রায় ২২ শতাংশ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার অভাব আছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। তবে উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে। এ খাতে মোট বরাদ্দ ৬ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, বেড়েছে ৬২২ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা খুবই কম, ২১ দশমিক ৮৬ টন। নতুন অর্থবছরে তা ২৯ লাখ টনে উন্নীত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩৭ লাখ টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪৬৭ লাখ টন। এর ন্যূনতম ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭ লাখ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম শিগগির নির্মাণ করা প্রয়োজন।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি উৎপাদনশীল খাত হচ্ছে শিল্প। এ খাতে মোট পাঁচটি মন্ত্রণালয় মিলে বরাদ্দ বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ। টাকার অংকে বরাদ্দ বেড়েছে ১০৭ কোটি। মোট প্রস্তাবিত বরাদ্দ ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে (বাণিজ্য, শ্রম, শিল্প, বিদেশী কর্মসংস্থান এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে) এবারের বরাদ্দ রয়েছে মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ অর্থ।

কৃষি ও শিল্প খাতকে দ্রুত এগিয়ে নেয়ার জন্য বিশেষভাবে কাজ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। এ দুটি খাত মানব উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। মোট বাজেটে উল্লিখিত দুটি খাতের হিস্যা যথাক্রমে ৫ দশমিক ২ এবং ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ৪১ হাজার ৪৮ কোটি এবং শিক্ষা খাতে ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। অন্যান্য সেবা ও সহায়তাধর্মী খাতগুলো থেকে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রবৃদ্ধি বেশি হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হতে পারে। 

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ২ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। এটা যথেষ্ট নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও সমাজকল্যাণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। গত সংশোধিত বাজেটে ছিল ৪০ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। বরাদ্দ বাড়ার হার ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে একত্রে, পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে (সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মুক্তিযুদ্ধ)। এক্ষেত্রে বয়স্ক ভাতা প্রতি মাসে দেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা আর বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা ৫৫০ টাকা। এ ভাতার পরিমাণ ন্যূনপক্ষে ১ হাজার টাকা হওয়া উচিত।  

বাজেটের একটি ভালো দিক হচ্ছে সবার জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু এবং তাতে গুরুত্ব দেয়া। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে আমরা মধ্য আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পদার্পণের পরিকল্পনা করছি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এ সুফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে এবং বৈষম্য কমাতে সার্বজনীন পেনশন প্রথা চালু করার বিষয়টি স্বস্তিদায়ক। এ স্কিমের আওতায় প্রজাতন্ত্রের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করার অভিপ্রায় যুক্তিসংগত। তবে এতে জনসমর্থন ও অংশগ্রহণের হার বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

বাজেটে ৩০টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা কিছুটা হলেও সম্ভব হবে। অন্যদিকে দেশে তৈরি ফ্রিজ ও এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত বিদেশী কম্প্রেসর ও অন্যান্য উপকরণের কর এবং শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের খরচ বাড়বে। সিগারেট ও বিদেশী মাছের ওপর কর ও শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব সমর্থনযোগ্য। তবে মোবাইল সেটের সম্পূরক শুল্ক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। 

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। মহিলা ও ৬৫ বছরের বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকায় নির্ধারিত আছে। সাড়ে ৩৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে করহার রাখা হয়েছে ২৫ শতাংশ। এর বেশি আয়ের ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগেও সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ ছিল। করোনাকালে তা কমানো হয়েছিল ২৫ শতাংশে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তা ৩০ শতাংশে বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। 

আমাদের বাজেট ঘাটতি মেটাতে গিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি ও বিদেশী উৎস থেকে ৭ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। এর পরিমাণ হ্রাস করতে কর আদায় বিশেষ করে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে কর-জিডিপির হার বছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা দরকার।

আমাদের মোট বাজেটের মাত্র ৩৬ শতাংশ ব্যয় হয় উন্নয়ন খাতে। বাকি ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় সরকার পরিচালন খাতে। ভবিষ্যতে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন ব্যয় বাড়াতে হবে। তাতে বরাদ্দকৃত খরচের আর্থিক প্রতিদান বাড়বে। নিশ্চিত হবে জনকল্যাণ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রথম চার বছর মোট বাজেট বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি বরাদ্দ নিশ্চিত করেছিল উন্নয়ন খাতে। এরপর ক্রমাগত সে হিস্যা কমেছে। ভবিষ্যতে তা বাড়ানো দরকার।

ড. জাহাঙ্গীর আলম: কৃষি অর্থনীতিবিদ; পরিচালক, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস এবং সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫