বৃষ্টিপাত আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়ার নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (২১ জুন) কাউনিয়া তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বৃদ্ধি তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে পানিবন্দি গ্রামবাসীর প্রতিদিন কাটছে নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) দাবি আগামী ৭২ ঘন্টায় রংপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে কাউনিয়া উপজেলার গদাই, ঢুষমারা, তালুক শাহবাজ,
পূর্ব নিজপাড়ার অংশ, গোপীডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, চর প্রাননাথ, শনশনিয়া, চর হয়বত খাঁ,
চর গনাই, আজম খাঁর চর গ্রামের নিম্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আমন ধানের বীজ তলা, উঠতি বাদাম খেত পানিতে ডুবে
গেছে। প্রায় অর্ধ শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
থাকায় আরো নতুন নতুন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
আক্রান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজানের ঢলে বুধবার (১৯ জুন) সকাল থেকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে করে তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে অবস্থিত কাউনিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি তিস্তার চর এলাকায় পানি প্রবেশ করে, তার মধ্যে ঢুষমারা, পূর্ব নিজপাড়ার অংশ, তালুক শাহবাজের অংশ, গোপীডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, প্রাননাধ, আজম খাঁর চর ও গনাই গ্রামের আমন ধানের বীজতলা ও প্রায় ৫০০ একর জমির উঠতি বাদাম খেত পানিতে ডুবে গেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর এলাকার চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে তাদের এলাকার ২০০ পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ও আমন ধানের বীজতলা, বাদাম খেত ও বিভিন্ন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বালাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. আনছার আলী বলেন, তার এলাকায় ৫টি গ্রামের নিস্ন অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আশঙ্কা করছেন পানি নেমে যাওয়ার সময় গ্রামগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাউবো শুষ্ক মৌসুমে যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করত, বর্তমান ভোগান্তি অনেক কম হতো।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব বলেন, তিস্তার
পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করছে। বাড়িঘর পানিতে ডুবে যাওয়ার
সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা প্রশাসন ও আমরা ত্রাণ বিভাগ বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত
রয়েছি।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিদুল হক বলেন, বন্যায় যাতে কেউ
ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে। পাশাপশি
স্থানীয় প্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ি
ঢলের পানি আসায় ডালিয়া ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেয়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
রয়েছে। বুধবার (১৯ জুন) বিকাল ৫টায় কাউনিয়া তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে বিপদ সীমার
৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
শুক্রবার (২১ জুন) বিকাল ৫টায় কাউনিয়া তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার
৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তার রেলসেতু পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার
ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়াকে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে বলে ধরা হয়।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন,
আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি
পেতে পারে। ফলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি
বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং রংপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির
কিছুটা অবনতি হতে পারে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, বন্যা মোকাবেলায়
সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত
রাখা হয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ
দেয়া হয়েছে।