সিলেটে বন্যায় পানিবন্দি ৭ লাখ মানুষ

প্রকাশ: জুন ১৯, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার মানুষ

সিলেট নগরীসহ জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনদিন ধরে চলা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার প্রায় সবগুলো নদ-নদীতে পানি বেড়ে গেছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদী। ফলে বন্যার দেখা দিয়েছে সিলেটের সব উপজেলায়।

বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা—কুশিয়ারাসহ প্রধান নদ-নদীর ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত ১টার হিসাবমতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯শ ৩৭ জন পানিবন্দি রয়েছেন। ৬২৭ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টি ওয়ার্ড এবং সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলাই আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার মানুষ কোম্পানিগঞ্জের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার, সিলেটে সুরমা বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, আমলসীদে কুশিয়ারা বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে সিলেট নগরীর বন্যা কবলিত এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করার ঝুঁকি থাকায় সিসিক ও সেনাবাহিনী বস্তা দিয়ে বাঁধ তৈরি করে দিয়েছে। নগরীর নিচু এলাকায় কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমড় পর্যন্ত পানি রয়েছে। পানির কারণে মানুষজন রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না। বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে নর্দমার পানি প্রবেশ করায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

এছাড়া নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, পাঠানটুলা, সাগরদীঘিরপার, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, মদিনা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। এসব এলাকায় বাসাবাড়িতে কোমর সমান পানি। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় মানুষ বড় কষ্টে আছে।

এদিকে সীমান্তবর্তী সিলেট সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গরু—মহিষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই সব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষজন। উপজেলার স্কুলগুলোকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা—জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ। সিলেট—সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরাবাজে পানি উঠে যাওয়ায় বিঘ্ন ঘটছে জীবনযাত্রায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী পরিচালক দিপক রঞ্জন তালুকদার জানান, উজানে এখনো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, সিলেট নগরীতে বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রিত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সেবা তারা পাবেন। পুরো বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, কিছু কিছু উপজেলায় সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫