ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলছে শেষ পর্যায়ের গরু, ছাগল ও মহিষের কেনাবেচা।
উচ্চবিত্ত পরিবার গরুর পাশাপাশি ছাগল দিয়েও কোরবানি দেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির
এ সময়ে নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারই এবার ছাগল কোরবানি দিচ্ছেন। হাটে চাহিদা থাকায় অসাধু
বিক্রেতারা ওজন বাড়াতে জোরপূর্বক ছাগলকে নল দিয়ে পানি খাইয়ে মোটাতাজা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিদিনই বিকাল বেলায়
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাটবাজারে গরু-ছাগল বিক্রি
হচ্ছে। অসাধু ছাগল বিক্রেতারা কোরবানির হাটের আশপাশে আগে থেকে অবস্থান করে জোরপূর্বক
নল দিয়ে ছাগলের মুখে পানি খাইয়ে পেট বড় করে রাখে। এতে ছাগলকে সাময়িক সুন্দর ও তরতাজা
দেখায়। ওই ছাগলগুলো সাইজে বড় দেখায়, হাটে ক্রেতাদের বেশি পছন্দ হয়। বেশি দামে বিক্রি
করে বিক্রেতারা।
তবে অনেক সময় ক্রেতারা ছাগল কিনে বাড়িতে নিয়ে গেলে হাঁচি-কাশি ও শুয়ে
থাকতে দেখে টেনশনে পড়ে যায়। আগামী দিন এ ছাগল বেঁচে থাকবে কিনা- এ চিন্তায় অনেক ক্রেতা
ছাগলকে জবাই করে দেয়। রোববার (১৬ জুন) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে
ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। দুপুরে একতা বাজারের গরুর হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী
উপজেলা নাঙ্গলকোট, কচুয়া, সদর দক্ষিণের নোয়াপাড়া ও চৌয়ারা থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা চৌদ্দগ্রামের
বিভিন্ন হাটবাজারে ছাগল নিয়ে আসে। নাঙ্গলকোট থেকে ছাগল নিয়ে আসা ব্যবসায়ী সবুজ ও স্বপনের
সঙ্গে কথা বলে নল দিয়ে পানি খাইয়ে ছাগলের পেট বড় করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, পেট খালি
থাকলে ছাগল ছোট দেখা যায়। তাই জোর করে পানি খাইয়ে পেট ফোলালে ক্রেতা মনে করে, ছাগল
স্বাস্থ্যবান। তাই সহজে ছাগল বিক্রি করা যায়। রোববার উপজেলার হারি সদ্দার বাজারে ছাগল ক্রয় করতে আসা ৮০
বছরের বৃদ্ধ চৌয়ারার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন বলেন, জোর করে নল দিয়ে পানি খাওয়ানো এবং
স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। জোর করে ছাগলকে পানি খাওয়ালে অনেক সময়
মারাও যায়।
ঐতিহ্যবাহী মিরশান্নী হাজী আখন আলী এতিমখানা ও মাদ্রাসা বাজারের পরিচালনা
কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রসিদ বলেন, জোরপূর্বক পানি খাওয়ানো ছাগল বাজারে আনতে আমরা
বারবার নিষেধ করেছি। এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পানি খাইয়ে ছাগল নিয়ে বাজারে প্রবেশ
করে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. নাহিদ হাসান বণিক বার্তাকে
বলেন, বিভিন্ন বাজারে কিছু অসাধু ছাগল ব্যবসায়ী জোর করে নল দিয়ে পানি খাইয়ে বাজারে
নেয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অমানবিক।
তিনি বলেন, একটা ছাগল বা পশু যার প্রাণ আছে, তাকে যদি আমরা জোরপূর্বক
কোনো কিছু খাওয়াই- এর কিছু পরিমাণ শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
যার ফলে ছাগলের প্রাণহানি ঘটে। এ সময় যদি কোনো খামারি এ ছাগলটি ক্রয় করে, তাহলে আর্থিকভাবে
ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সুতরাং, বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের উচিত বেশি সুন্দর ও পেট ফোলা ছাগল
ক্রয় থেকে বিরত থাকা।