চীনা ইভির ওপর শুল্ক আরোপ করে ক্ষতির মুখে ইউরোপ

প্রকাশ: জুন ১৬, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনে তৈরি বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশ। সিদ্ধান্তটি চীনকেন্দ্রিক হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ইউরোপই। বিশেষ করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে জার্মানির গাড়ি নির্মাতারা। খবর ইউরোনিউজ।

অতিরিক্ত শুল্কের কারণে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ফক্স ওয়াগনের মতো বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কেননা সব কোম্পানিরই চীনে বড় আকারে উৎপাদন অবকাঠামো রয়েছে। এ কারণে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের তীব্র বিরোধিতা করছে জার্মানি। 

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ এরই মধ্যে উল্লেখ করেছেন, ইইউর বাড়তি শুল্ক আরোপ দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে জার্মানির কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রগুলো প্রভাবিত হবে। এপিতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতা ও অতিরিক্ত শুল্কসংক্রান্ত বাধা সবকিছুকে আরো ব্যয়বহুল করে তোলে। আমরা আমাদের বাজার বিদেশী কোম্পানগুলোর জন্য বন্ধ করি না। কারণ আমাদের কোম্পানিগুলো এমন কিছুর সম্মুখীন হোক সেটা আমরা চাই না।’ 

ইইউর এ সিদ্ধান্তের ফলে বিএমডব্লিউ, ফক্স ওয়াগন ও মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো জার্মান নির্মাতারা অনেকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোম্পানিগুলো চীনে কারখানা থাকায় দেশটির সরকারের দেয়া ভর্তুকি থেকে লাভবান হয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে সস্তা জমি, তুলনামূলক শিথিল করনীতি ও অন্যান্য আইনি সুবিধা।

শুল্কের বিপরীতে চীন প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে। তখন ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে দেয়া সুবিধা প্রত্যাহার হতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো জার্মান অটোমোবাইল নির্মাতাদের বর্তমান বিক্রির বেশির ভাগই চীনা বাজার থেকে আসছে। ফলে ইউরোপ-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে তাদের বিক্রি কমে আসতে পারে।

ইইউর এমন সিদ্ধান্তে ব্যাঘাত ঘটতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি তেলনির্ভর গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যও। ইলেকট্রিক কার স্কিমের সিইও থম গ্রুট বলেন, ‘আমরা যদি ২০৩৫ সালের মধ্যে শতভাগ ইভির লক্ষ্য পূরণ করতে চাই তাহলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। কারণ ইভির ৫৭ শতাংশ ব্যাটারি আসে চীন থেকে।’

সিএমসি মার্কেটের প্রধান বাজার বিশ্লেষক জোখেন স্ট্যানজল বলেন, ‘চীনা গাড়ি নির্মাতাদের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে ইইউ আসলে নিজের পায়েই কুড়াল মেরেছে। স্বাভাবিকভাবেই জার্মানি এতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে। কারণ এটা ভালো কিছু ডেকে আনার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করবে।’

প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাজনীতিবিদরা চীনা ইভিকে নিজেদের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। ইইউ আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর সমাধান না হলে ৪ জুলাই থেকে চীনা উৎপাদনকারীদের শুল্ক বাবদ বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। গত অক্টোবরে শুরু হওয়া ইউরোপীয় কমিশনের তদন্তে যারা সহযোগিতা করছে, তাদের জন্য শুল্কহার হবে ২১ শতাংশ। যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি, তাদের জন্য শুল্কহার ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। এর সঙ্গে বিদ্যমান শুল্ক যোগ হলে দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশের বেশি।

এর আগে ওয়াশিংটন চীনের বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে শুল্কহার চার গুণ করার ঘোষণা দিয়েছিল। এর পরই ইইউ জানিয়ে দিল, চীন যেসব গাড়ি উৎপাদনে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেয় তা মোকাবেলায় ইউরোপও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫