আলোকপাত

কালো টাকার রাজনৈতিক অর্থনীতি

প্রকাশ: জুন ১৬, ২০২৪

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

টাকা সব সময় রঙিন। তবে যে টাকার আয় এবং আয়ের উৎস ঘোষণা না দিয়ে রাষ্ট্রের প্রাপ্য কর ফাঁকি দেয়া হয় বা যায়, যে টাকা অবৈধভাবে অর্জিত, সে টাকাই কালো টাকা। মূলত ও মুখ্যত এ কালো টাকাই যেকোনো অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য, প্রতারণা বঞ্চনা, অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যত্যয়ের প্রমাণক; অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি ও ন্যায়নীতি নির্ভরতাবিহীনতার সূচক। অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তির পরিবর্তে বিচ্যুতির মাধ্যমে সমূহ ক্ষতি সাধনের প্রভাবক ভূমিকা পালন করে কালো টাকা। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আবহমান কাল থেকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নানা আঙ্গিকে বিচার-বিশ্লেষণের অবকাশ উঠে আসে। 

কালো টাকা সাদা করার পদ্ধতি প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মতভেদ যাই-ই থাকুক না কেন, এর যথাবিধি ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সামাজিক অর্থনীতি তথা রাষ্ট্রের এখতিয়ার, সরকার পরিচালিত রাজনৈতিক অর্থনীতির হওয়া উচিত নয়; অবশ্যই কালো টাকা সমাজের বা সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনৈতিকতা ও অবস্থাপনার সৃষ্টি, স্বচ্ছতা জবাবদিহি ও ন্যায়-ন্যায্যতা নীতিনির্ভরতায় বিপুল ব্যর্থতার প্রতিফল। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক নজির থেকে দেখা যায়, তুলনামূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাওয়ার পর হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, ইরান, নিকারাগুয়া, বলিভিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠতে পেরেছে। এসব দেশ প্রথম পর্বে কালো টাকাকে প্রযত্ন দিতে সাদা করাকে গুরুত্ব দিত। পরবর্তী সময়ে শক্ত হাতে কালো টাকা সৃষ্টির উৎস বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় প্রতিবিধান জোরদার করার ফলে সেসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে চমকপ্রদ গতিসঞ্চার হয়েছে। আরো খোলাসা করে বলা যায়, যেমন সুহার্তোর ১৯৬৫-৯৮ সালের ৩৩ বছরের শাসনকে ইন্দোনেশিয়ার উন্নয়নতত্ত্বে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ নামে আখ্যায়িত হয়। কিন্তু গত দুই দশকে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হওয়ায় সেখানে এখন অর্থবহ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বা হচ্ছে। 

আমাদের এ উপমহাদেশে ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত কর আহরণ পদ্ধতি সংস্কার কর্মসূচির আওতায় তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অর্থনীতি থেকে কালো টাকা সাফ করার উদ্যোগ নিয়েছিল, দুর্নীতি দমনের ঘোষণা দিয়ে আসা সামরিক সরকার তা লেজ গোবরে মিশিয়ে ফেলে। সেখানে উদ্দেশ্য বিধেয়র মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল। 

বাংলাদেশে বছর বছর কালো টাকাকে কর প্রদানের সময় ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ সংজ্ঞায়িত করে গুরুতর অপরাধটিকে হালকা করার অবস্থান নেয়াকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে সমালোচনা হচ্ছে। সংবিধানের ২০(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না’। সংবিধানের এ বিধানমতে অনুপার্জিত আয় যদি কালো টাকা হয় তাহলে কালো টাকার সংজ্ঞা ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ এবং এ সংজ্ঞা দুর্নীতির সঙ্গে কালো টাকার যে ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে সেটাকে অনেকটাই গৌণ বা লঘু করে দিচ্ছে কিনা তা আইনবেত্তাদের দেখা ও এর পরীক্ষা পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে সুশীল সমাজ থেকে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে অনেক সময় বৈধভাবে অর্জিত অর্থের ওপর যেমন জমিজমা, অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট, দোকান ইত্যাদি রিয়েল এস্টেট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রকৃত দাম না দেখিয়ে কম দাম দেখালে রেজিস্ট্রেশন খরচ, স্ট্যাম্প খরচ, সম্পদ কর ও ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে কালো টাকাকে ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বলাই সংগত এবং তা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে, তবে কোনো অবস্থাতেই, বছর বছর সময় দিয়ে, বিদ্যমান করহার কমিয়ে নয়। উপরন্তু জরিমানা দিয়ে তো বটেই। আয়কর আইনে প্রযোজ্য কর, জরিমানা পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ রাখাই আছে। প্রসঙ্গত যে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০০৮) প্রযোজ্য করসহ বছরপ্রতি ১০ শতাংশ হারে (সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ) জরিমানা দিয়ে এ জাতীয় অপ্রদর্শিত আয় ‘প্রদর্শন’ বা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সময় শেষ হওয়ার পর যাদের কাছে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা পাওয়া যেত তাদের বিরুদ্ধে আয়কর আইনেই জেল-জরিমানার ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছিল। ওই সময় এ স্কিম ইতিবাচক ফলাফল এনে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সময়সীমা অবারিত করে, জরিমানা না দিয়ে, হ্রাসকৃত হারে কর দিয়ে এবং অপ্রদর্শিত আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হবে না—এ ধরনের ইমিউনিটি দিয়েও কালো টাকা সাদা করায় সাড়া পাওয়া যায়নি। কালো টাকার রাজনৈতিক অর্থনীতির এ চেহারা ও চরিত্র সবার জন্যই বেশ উদ্বেগজনক। 

আশির দশকের তুলনায় নব্বই দশক থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে বাড়তে তখনকার সাড়ে ৪ বা ৫ শতাংশ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছলেও এ প্রবৃদ্ধির সুফল প্রধানত কয়েক হাজার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে পুঞ্জীভূত হয়ে চলেছে। সেজন্যই মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’-এর গবেষণা প্রতিবেদনে ২০১২-১৭ সাল এ পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ডলার বা ২৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার নির্ণীত হয়েছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা মহামারী আঘাত হানার আগের ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা (৭৫ বিলিয়ন ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে বলে মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি’র গবেষণায় উদ্ঘাটিত হয়েছে।

হলমার্ক, বিসমিল্লাহ এমএলএম কেলেঙ্কারি, রাতারাতি মালিকানা দখলকারী ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির সাগর চুরির পর, বেশি দিন আগের কথা নয় ক্যাসিনো কাণ্ড, প্রখ্যাত প্রতারক, মাথার মাথাদের, স্বনামধন্য গাড়িচালক ও গোল্ডেন ব্যক্তিনিচয়ের ছিটেফোঁটা কেচ্ছাকাহিনী থেকেও তো অনুমান করা চলে কী ধরনের ক্ষরণের শিকার হতে চলেছে এ অর্থনীতি। স্বেচ্ছা সহনশীল সলিলা (রেজিলিয়েন্ট) শক্তির জোরে, আমজনতার ইমিউন পাওয়ার এখনো বলশালী বলেই অর্থনীতি স্ট্রোক করছে না। এটাকেই আত্মতুষ্টির হেতু ধরে নিয়ে অর্থনীতির মৌল সহায়ক নৈতিক শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকাটাই হবে এর ভালো থাকতে দেয়ার অন্যতম উপায়। প্রতিকার প্রতিবিধান ছাড়া কালো টাকা অর্থনীতির জন্য অর্থনীতিতে ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। 

সৎ ও নিয়মিত করদাতা ১৫-২৫ শতাংশ কর দেবেন আর কালো টাকার মালিক ১০-১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করতে পারবে—এ নীতির ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত যে বছরের পর বছর ৭ বা ৮ শতাংশের নিচে রয়ে যাচ্ছে, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এ অনৈতিক নীতির পরিপোষণও এবং কালো টাকার দাগি আসামিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া একটি।

কয়েক বছর আগে কালো টাকায় কেনা স্থাবর সম্পত্তি এখন নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হলে বিগত বছরগুলোয় এ সম্পত্তি ব্যবহারজাত আয়ের ওপর কর আহরণের বিষয়েও ছলচাতুরীর প্রশ্রয় দেয়া হবে। এ নজিরের ফলে এ ধরনের খাতে কর প্রদানে বিলম্ব বা বিরত থাকার প্রবণতা বাড়বে। যারা রাষ্ট্রের সব নিয়মকানুন মানার বাধার বিন্দাচল পেরিয়ে স্থাবর সম্পত্তি, অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল, হাই-টেক পার্ক, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন তাদের সেই পরিশ্রম ও কর প্রদান অপমান-অবমাননার শিকার হবে যদি এখন বিনা ব্যাখ্যায়, জরিমানা ও কর প্রণোদনা দিয়ে জামাই আদরে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। অর্থনীতিতে বিশেষ করে কর রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে নৈতিক দাবি দুর্বল হবে এবং তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। 

অর্থনীতিতে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার প্রথম ও প্রধান উপাদেয় উদ্দেশ্য জরিমানা ও নিয়মিত কর আদায়, তারপর পুষ্টিকর খাতে সেই অর্থ বিনিয়োগ। কয়েক বছর আগে কালো টাকায় কেনা স্থাবর সম্পত্তি কিংবা পুঁজিবাজারে মাত্র সীমিত সময়ে লকইন করে রাখা বিনিয়োগ থেকে অর্থনীতির জন্য লাভের চেয়ে ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ নীতিভ্রষ্টতার দোষে ক্ষতিই বেশি হয়েছিল বলে এরই মধ্যে প্রতীয়মান হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পদের পাহাড়চুম্বী উন্নতি আয়বৈষম্যের বাহ্যিক এবং রাজনৈতিক অর্থনীতির গজেন্দ্র গামিতার প্রমাণ এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। নানা আঙ্গিক ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরীক্ষা-পর্যালোচনায় কালো টাকা পুষ্টি সাধনের নিমিত্তে অর্থনীতিতে ফিরে আসার পরিবর্তে অর্থনীতি বরং কালো টাকামুখী হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়েই চলেছে। কালো টাকা গণতন্ত্রসহ সব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সংক্রমণ ও দখল করার পথে ধাবমান। 

মহামারী করোনা আঘাত হানার পর থেকে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স প্রবাহে যে ঢল নেমেছিল তাতে প্রমাণ পাচ্ছিল যে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজি পাচার শ্লথ হয়ে পড়ছিল। ২০১৯ সালের ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের তুলনায় ২০২০ সালে বাংলাদেশে ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এক বছরে ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এ অভূতপূর্ব রেমিট্যান্সের জোয়ার দেশের অর্থনীতিকে মহামারীর নেতিবাচক অভিঘাত থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়ক হয়েছিল। 

ভারতের সিঅ্যান্ডএজি এবং দেশের সুশীল সমাজের পর্যবেক্ষণ (বণিক বার্তায় ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে প্রকাশিত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলামের নিবন্ধ দ্রষ্টব্য) অনুসারে বলা যায়, সামান্য কিছু অর্থ দুর্নীতিবাজরা হ্রাসকৃত কর দিয়ে বৈধ করে নিলে ওই বৈধকরণের নথিপত্রগুলো তাদের হাজার হাজার কোটি কালো টাকা নিরাপদে রেখে দেয়ার ভালো দালিলিক সুরক্ষা দিতে পারে। ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে কালো টাকা আড়াল করার ভালো ব্যবস্থার সুবাদে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনের মানেই হলো একটা সুনির্দিষ্ট সমঝোতা-নেটওয়ার্কের সহায়তায় দুর্নীতিবাজরা নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমর্থ হচ্ছে। এটি দৃশ্যত দুর্নীতিবাজদের জন্য সম্ভাব্য দুর্নীতি দমনের জাল থেকে পলায়নের পথ খুলে দেয়ার শামিল। এ ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে কালো টাকার মালিকদের সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে যে, এ সুবিধা নিলে তাদের দুর্নীতিকে দমন করা হবে না। 

রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘দুর্নীতিজাত অনুপার্জিত আয়’-এর উৎস, উপায় ও উপলক্ষ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা। অবৈধভাবে অর্জিত বা আয়ের জ্ঞাত সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন যেকোনো অর্থবিত্তকে কালো টাকা অভিহিত করার যে আইনি অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সেটাই সাংবিধানিকভাবে বেশি যৌক্তিক। এর আলোকে দুর্বৃত্তায়নের ভয়াবহ বেড়াজাল থেকে আইনের আওতায় ‘মার্জিনখোর রাজনীতিবিদ, ঘুসখোর সুশীল সেবক (আমলা) এবং মুনাফাবাজ/কালোবাজারি/চোরাকারবারি/ব্যাংক ঋণ লুটেরা ব্যবসায়ী—শিল্পপতিদের’ অপরাধের শাস্তি বিধান করা হলে সমাজে ও অর্থনীতিতে একটা ইতিবাচক বার্তা যাবে। জরিমানা ছাড়া, অত্যন্ত হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুযোগ এবং ‘অর্থের উৎস নিয়ে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কতৃর্পক্ষ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন না’ জাতীয় বিধান জারি বলবৎ থাকলে দেশ সমাজ ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজের কনসেপ্ট ‘নৈতিক বিপদ’-এর উপস্থিতি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাবে। 

কোনো উদীয়মান অর্থনীতিতে উন্নয়ন অর্জনে সফল হওয়ার পরও যদি আয় ও সম্পদবৈষম্য না কমে, বরং বাড়ে তাহলে বুঝতে হবে সেই অর্থনীতিতে এমন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে যার প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের আবিষ্কার ও প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতিজাত কালো টাকা লালন থেকে সরে না এলে আয় ও সম্পদ বণ্টনের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য থেকে বাংলাদেশের মুক্তি মিলবে না। কালো টাকা সাদা করার মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে যৌক্তিকতা দেয়ার চেষ্টা না করাই সমীচীন। কালো টাকা সৃষ্টির প্রেরণা ও প্রযত্ন প্রদানের নীতি সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য হওয়াই কাম্য।

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫