ঈদযাত্রা

সড়কে ভোগান্তি বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ, যাত্রীচাপ বেড়েছে রেলপথে

প্রকাশ: জুন ১৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে গতকাল। সড়ক, নৌ ও রেলপথে গতকাল যাত্রীচাপ ছিল বেশি। এর মধ্যে সকালে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টোল প্লাজায় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। এছাড়া দূরপাল্লার বাসগুলোর বিরুদ্ধেও উঠেছে আকস্মিক ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ। রেলপথেও গতকাল ঈদযাত্রীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে কয়েকজনকে আটকও করা হয়। সে তুলনায় লঞ্চে ভ্রমণকারীর সংখ্যা দেখা গেছে তুলনামূলক কম। 

বাস টার্মিনালগুলোয় সকাল থেকেই ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল নামে। কিন্তু মহাসড়কে যানজটের কারণে দূরপাল্লার বাসগুলো রাজধানীতে প্রবেশে দেরি হয়। এতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। আবার সকালে বিভিন্ন মহাসড়কে বেশ যানজটও দেখা গেছে। 

সরজমিনে রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের লম্বা লাইন। তবে অধিকাংশ বাসের কাউন্টারে টিকিট নেই। আবার কিছু পরিবহনের টিকিট থাকলেও সংকট রয়েছে বাসের। 

টাঙ্গাইলগামী নিরালা সুপার পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিটের জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন ৩-৪ ঘণ্টা ধরে। টিকিট থাকলেও পর্যাপ্ত বাস নেই। ফলে যাত্রীদের টিকিট দেয়া হচ্ছে না। যদিও যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, বাস ঠিকই রয়েছে। কিন্তু ভাড়া বাড়ানোর জন্য কাউন্টার কর্তৃপক্ষ বাহন সংকটের অজুহাত দিচ্ছে।

টাঙ্গাইলগামী যাত্রী মুহিবুর রহমান বাসের টিকিটের জন্য ৩ ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘৩ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাস আসছে না। কাউন্টার থেকেও আমাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে না। মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ভাড়া ২৫০ টাকা। এখন ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাস সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছে বাস কর্তৃপক্ষ।’

গাবতলীতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জগামী যাত্রী 

মঞ্জুর ইলাহী বলেন, ‘প্রতি বছরই ঈদের আগে টিকিটের মূল্য বাড়ানো হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য না। আবারো যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।’ এদিকে ঢাকা-সাভার মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলী কোরবানির পশুর হাটের কারণে কল্যাণপুর থেকে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত ছিল থেমে থেমে যানজট। এতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ে ঘরমুখো মানুষজন। অন্যদিকে, টাঙ্গাইলের মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী লেনের ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ভোর থেকে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও ধীরগতি ছিল দিনব্যাপী।

জানা যায়, শুক্রবার ভোরে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পুংলী এলাকায় মালবাহী একটি ট্রাক উল্টে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পরিবহন চলাচল। পুংলী থেকে টাঙ্গাইলের আশিকপুর বাইপাস পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার কারণে সার্ভিস লেন দিয়ে চলাচল করতে থাকে গাড়ি। তবে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মালামালসহ দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি সরিয়ে নেয়া হয়। এতে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও রয়েছে ধীরগতি।

ঈদ যাত্রাকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিল ঘরমুখো মানুষের ঢল। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে যানবাহন চলেছে ধীরগতিতে। বিশেষ করে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে থেমে থেমে চলেছে গাড়িগুলো। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। গতকাল সকালের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে দেখা যায়। জুমার নামাজের পর গাড়ির চাপ তীব্র আকার ধারণ করে। মহাসড়কের উভয় লেনে একই দৃশ্য দেখা গেছে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে শুরু করে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত বেশ থেমে থেমে চলেছে গাড়িগুলো। বেলা ১১টার দিকে চান্দিনা অংশে বেতন-বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। ফলে ১০-১২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টা দুয়েক পর অবরোধ তুলে নিলে যানজট কমতে থাকে। তবে হঠাৎ গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ধীরগতিতে চলতে হয়। এ প্রসঙ্গে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল আলম জানান, জুমার নামাজের পর মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ে। চান্দিনায় শ্রমিকদের অবরোধের ফলে যানজট তৈরি হয়। পরে সেটি ছাড়ানো হলেও এর প্রভাব বিদ্যমান ছিল।

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম জানান, ‌শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয়মুখী লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা সরে যাওয়ার পর গাড়ি চলাচল শুরু করে।

ঘরমুখো যাত্রীর চাপ ছিল ঢাকা-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায়। সকালে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হয় যানজট। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় টোল প্লাজায় যানবাহনগুলোকে টোল পরিশোধ করতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। 

সড়কে ভোগান্তির চিত্র উঠে এলেও গতকাল রেল ও নৌপথে যাত্রী ভোগান্তি ছিল তুলনামূলক কম। সকাল থেকে প্রতিটি ট্রেনই যথাসময়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। কোনো ট্রেনের যাত্রা বিলম্বের খবর তেমন একটা পাওয়া যায়নি। একই চিত্র নৌপথেও। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ঠিক সময়েই লঞ্চ ছেড়ে গেছে। 

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘দুটি ঈদ স্পেশালসহ ৪৩টি আন্তঃনগর ও লোকাল মেইল কমিউটার মিলিয়ে ৬৯টি ট্রেন যাত্রী বোঝাই করে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে সারা দিনে অন্তত দেড় লাখ মানুষ রেলপথে ঢাকা ছেড়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল বিপর্যয় নেই। আশা করি এমনটা ঘটার সম্ভাবনা নেই।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫