জ্বলানি পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যাবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জ্বলানি পণ্যের দাম বাড়লে তা মূল্যস্ফীতিকে বেশ প্রভাবিত করে।’
গতকাল রাজধানীতে ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ও বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যমেয়াদি প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিমত তুলে ধরেন। আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। বিআইডিএস আয়োজিত এ সভায় সঞ্চালক ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, ‘ভারত কম দামে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে পারছে। আমরা চেষ্টা করেও হয়তো পারিনি। কিন্তু চীন বা ভারতের মতো তৃতীয় কোনো দেশ থেকে আমরা তেল আমদানি করতে পারি।’
প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ শর্তে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে গ্রাহকের বৈধ আয়ও অপ্রদর্শিত আয় হতে পারে।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনভিপ্রেতভাবে জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বড় অংকের টাকা অপ্রদর্শিত থেকে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শনের সুযোগ দেয় দরকার। তবে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শনের সুযোগে একেবারে ট্যাক্স মওকুফ করা কিংবা একটি নির্দিষ্ট রেট বেঁধে দেয়ার পক্ষে নই আমরা। আমাদের অবস্থান মধ্যবর্তী। অপ্রদর্শিত সম্পদের কর ১৫, ২০, ৩০ বা ৩৫ শতাংশ হতে পারে। সম্পদের ওপর ভিত্তি করে তা নির্ধারিত হওয়া উচিত। এটা নির্দিষ্ট করে বেঁধে ফেলা উচিত নয়।’
ঋণখেলাপিদের বিষয়ে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘ঋণ পুনঃফসিলের সুযোগ চারবার দেয়া উচিত নয়। এ দীর্ঘ সময়ের কারণে ঝুঁকি তৈরি হয়। কেন আমরা অযথা এ ঝুঁকি নেব?’
প্রস্তাবিত বাজেটে চাকরিজীবীদের স্বাস্থ্য বীমার বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ড. বিনায়েক সেন। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এটি বাংলাদেশেও চালু হওয়া উচিত।’
ড. মনজুর হোসেন বলেন, ‘আকারের দিক থেকে প্রস্তাবিত বাজেটকে চলতি বাজেটের সঙ্গে তুলনা করলে এবং মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, বাজেট আসলে ছোট হয়েছে। বাজেটকে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে একটা ভারসাম্যে আনা হয়েছে। কিছুটা খরচ কমানোর দিকে যাওয়া হয়েছে, আবার প্রবৃদ্ধিটা ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এটাকে আমরা সাহসী পদক্ষেপ মনে করি। কারণ ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা দরিদ্র শ্রেণীর, প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের কিছুটা সুযোগ দেয়া হয়েছে। কারণ মূল্যস্ফীতি যেন তারা সমন্বয় করতে পারে। ফলে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এখন এটি কতটুকু কাজ করবে, সেটি পরে দেখা যাবে। সর্বোপরি সরকার চেষ্টা করছে আগামী অর্থবছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে। যদিও বাজেট বক্তৃতায় আর্থিক খাতগুলো নিয়ে কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।’