সংঘাতের প্রথম চার মাস

ফিলিস্তিনে বেসরকারি খাতে দিনে ক্ষতি ২ কোটি ডলার

প্রকাশ: জুন ০৯, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সর্বাত্মক যুদ্ধ ফিলিস্তিনি বেসরকারি খাতকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গুরুতর হ্রাসের পাশাপাশি অভূতপূর্বভাবে বেড়েছে বেকারত্ব। গত বছরের অক্টোবরে হামলার শুরু থেকে চার মাসে প্রতিদিন গড়ে কোটি ৯০ লাখ ডলার ক্ষতির শিকার হয়েছে ফিলিস্তিনের বেসরকারি খাত। খবর দ্য ন্যাশনাল।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (পিসিবিএস) এক যৌথ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রায় অর্ধেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুদ্ধে প্রভাবিত হয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২৯ শতাংশ গাজা উপত্যকায় শতভাগ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন হ্রাস বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

গাজা পশ্চিম তীরে বেসরকারি খাতে উৎপাদনের হিসাবে চার মাসে আনুমানিক ২৩০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। সম্পত্তি স্থায়ী সম্পদের ক্ষতি বাদ দিলে প্রতিদিন প্রায় কোটি ৯০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি নির্মাণ খাত উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এরপর রয়েছে শিল্প, পরিষেবা অন্যান্য ব্যবসায়িক খাত। পশ্চিম তীরের তুলনায় গুরুতর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে গাজা। উপত্যকার নির্মাণ শিল্প খাত পুরোটাই ধসে পড়েছে।

ফিলিস্তিন অঞ্চলের মোট কর্মসংস্থানে ৬৬ শতাংশ অবদান রাখে বেসরকারি খাত। এর অধীনে রয়েছে ছোট থেকে মাঝারি আকারের পারিবারিক মালিকানাধীন উদ্যোগ। খাতটি উৎপাদন বাজার হিসেবে ইসরায়েলের ওপর খুবই নির্ভরশীল। গবেষণা সংস্থা হিলটাওয়ার রিসোর্স অ্যাডভাইজার্সের বিশ্লেষক সিরিল উইডারশোভেন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের মধ্যে বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, তাতে অনেক উদ্বেগ রয়েছে। অবরোধ বড় আকারের চলাচলের বিধিনিষেধ আরো কয়েক মাস থাকবে। ইসরায়েলের অর্থনীতি বা অবকাঠামোয় সরাসরি প্রবেশ করতে না পারলে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকার।

রামাল্লাভিত্তিক প্যালেস্টাইন ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক রাজা খালিদি বলেন, ‘গাজায় পুরো অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার মনে হয় না কিছু বাকি আছে। গাজার অর্থনীতিকে আক্ষরিক অর্থে মাটি থেকে পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

যদি আগামী আগস্টের শেষ অবধি যুদ্ধ চলে তবে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জিডিপি ২০২৩ সালের তুলনায় ১৬ দশমিক শতাংশ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ১৮ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে আইএলও-পিসিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যুদ্ধ আরো তিন মাস চললে অঞ্চলে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ৪৭ দশমিক শতাংশে পৌঁছাবে। বেকারত্ব ২০২৩ সাল থেকে লাখ ২২ হাজার বেড়ে লাখ ৬৮ হাজারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বাভাস দেখায় যে নতুন পরিস্থিতিতে বেকারত্বের হার অভূতপূর্ব, যা ২০২২ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা সময়কালের বেকারত্বের হারকে ছাড়িয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকও ফিলিস্তিনের বেকারত্বের হার তুলে ধরেছে। বহুপক্ষীয় ঋণদাতা গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় আনুমানিক দুই লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ফলে অধিকৃত পশ্চিম তীরে লাখ ৪৪ হাজার মানুষের কাজ নেই।

অব্যাহত যুদ্ধের কারণে পশ্চিম তীর থেকে প্রায় লাখ ৪৮ হাজার আন্তঃসীমান্ত কর্মী ইসরায়েলের শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটিও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বেকারত্বের মাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ।

গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের নবম মাস অতিবাহিত হয়েছে। সংকীর্ণ অঞ্চলের অবকাঠামো ধ্বংস ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে।

 প্রতিবেদনে বলা হয়, ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে গাজা বৃহত্তর ফিলিস্তিনি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে পেতে পুনরুদ্ধার করতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫