চতুর্দশ বর্ষে বণিক বার্তা

প্রকাশ: জুন ০৭, ২০২৪

দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বণিক বার্তার প্রথম সংখ্যাটি বাজারে আসে ২০১১ সালের ৭ জুন। সেদিন একজন তরুণ সাংবাদিকের সম্পাদক হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তবতায় একটি মুদ্রিত সংবাদপত্রের ধারাবাহিকভাবে ১৩ বছর টিকে থাকা ও আস্থা অর্জন করা এখন আর কারো অগোচরে নেই। এ প্রাপ্তির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে বণিক বার্তার তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতা ও নির্ভুল সংবাদের প্রতি অঙ্গীকার। সাংবাদিকতা ও তথ্যের প্রতি অনুরাগ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমাদের দুর্বল করেনি। বরং সাংবাদিকতার প্রতি অঙ্গীকারের কারণে বণিক বার্তা পাঠকের কাছে তার স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে। ১৪ বছরে পদার্পণে সামনের দিনের অগ্রযাত্রায় আমাদের চ্যালেঞ্জ মোটেও কমেনি। 

ডিজিটাল মিডিয়া এখন ভবিষ্যৎ—এমনটাই সবাই বলছেন। এমনকি ছাপা কাগজ এখন কিউআর কোড ব্যবহার করে পাঠককে নিজেদের ডিজিটাল আউটলেটের সঙ্গে যুক্ত করে নিচ্ছে। প্রতিটি প্রিন্ট মিডিয়া এখন নিজস্ব ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। ছাপা কাগজের সুনাম কাজে লাগিয়ে সংবাদপত্রগুলো ডিজিটাল দুনিয়ায় শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে। তাই প্রিন্ট হোক কিংবা ডিজিটাল—টিকে থাকতে হলে সুসাংবাদিকতার বিকল্প নেই। ভিডিও, পডকাস্ট, অনলাইন সংবাদ নিয়ে একসময়ের প্রিন্ট আউটলেটগুলো সমান্তরালভাবে ডিজিটাল হয়ে উঠছে। এ যুগ সাংবাদিকদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সাংবাদিককে নতুন বাস্তবতায় মানিয়ে নিতে হলে একই সঙ্গে প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজের দক্ষতা অর্জন করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের মানসিক আগ্রহের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এ রূপান্তরের যাত্রায় নিজেকে হালনাগাদ করতে না পারলে সাংবাদিক তার পেশাগত গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন। 

শুধু ডিজিটাল দুনিয়ার ঝাঁকুনি ছাড়াও দেশে-দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন, যুদ্ধ, সংঘাত সাংবাদিকদের কাজ কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু উল্টো প্রশ্নও আমরা তুলতে চাই। শুধু কি বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা বা রাষ্ট্রীয় নীতিই সুসাংবাদিকতার বাধা, নাকি আমরা সাংবাদিকরাও পেশাগত দায়িত্ব-দক্ষতায় পিছিয়ে যাচ্ছি? ‘প্যাশনেট সাংবাদিকতা’ বলতে যা বোঝায় সেটা আমরা কতটা করছি। তরুণরাই বা কতটা এ রকম সাংবাদিকতায় আগ্রহী হচ্ছেন? সাংবাদিকতার মূল কাজ ক্ষমতাবানদের প্রশ্ন করা, নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যবহার করে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা, যে চর্চা বাংলাদেশে সীমিত। 

কর্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামোর সামনে দাঁড়িয়ে অনেক দেশে সাংবাদিকরা জোরালোভাবে তাদের প্রশ্নটা করতে পারছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রে সাংবাদিকের স্বাধীনতার পরিসর সমান নয়। কিন্তু তাতে সাংবাদিকের দায়িত্ব, কাজ বদলে যায় না। উন্নত দেশগুলোয়ও সাংবাদিকদের ওপর রাষ্ট্র ও সরকারের চাপ আছে। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমাদের পূর্বসূরিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সাংবাদিকদের জন্য আইনি বাধা অতীতেও ছিল। পেশার প্রতি অনুরাগ ও অঙ্গীকারে ঘাটতি থাকায় আমাদের দেশে সাংবাদিকতা গুণমানে পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

আজকের দিনে সুসাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় বিতর্ক প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের হস্তক্ষেপ। কিন্তু আমরা ১৩ বছরের যাত্রায় কখনো মালিক পর্ষদের হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হইনি। 

আজ বণিক বার্তা ১৪ বছরে পা রাখছে। শুরু থেকেই প্রচারসংখ্যা বৃদ্ধির তথাকথিত দৌড়ে আমরা আগ্রহী হইনি। বরং আমরা মনোযোগ দিয়েছি তথ্য ও প্রামাণিক সাংবাদিকতায়। আমরা পাঠকের জন্য নির্ভুল তথ্য-পরিসংখ্যান ও প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ নিশ্চিত করতে চেয়েছি। আর অব্যাহত প্রচেষ্টা ও সুসাংবাদিকতা বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জগতে আমাদের পদচিহ্ন নিশ্চিত করেছে। পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতারা আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন। নানা ধরনের প্রতিকূলতা, সংবাদপত্র জগতের যুগসন্ধির টানাপড়েন মোকাবেলা করে বণিক বার্তা স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে। বড় প্রচারসংখ্যার দাবি আমরা করি না। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে ১৩ বছরে আমরা বিশ্বস্ত একটি পাঠকগোষ্ঠীকে পাশে পেয়েছি। তাদের আস্থায় আমরা দীর্ঘ যাত্রার স্বপ্ন দেখতে পেরেছি, নতুন পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার প্রক্রিয়ায় নিজেদের যুক্ত রেখেছি। সৃষ্টিশীল ও নির্ভরযোগ্য কনটেন্ট পাঠকের সামনে হাজির করা আমাদের সাংবাদিকতার প্রাণ। কনটেন্ট নিয়ে আমরা নিত্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত রেখেছি এবং প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করছি।

বণিক বার্তা প্রিন্টের সমান্তরালে ডিজিটাল পরিসরে উপস্থিত থাকছে। ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইনে বণিক বার্তার কনটেন্ট পাঠকরা পড়ছেন, শুনছেন, দেখছেন। আমরা সৃষ্টিশীলতা ও সুসাংবাদিকতা দিয়ে ডিজিটাল প্লাটফর্মের পাঠকের চাহিদা পূরণে কাজ করছি। এ যাত্রায় আমাদের আরো পথ পাড়ি দিতে হবে। সেজন্য প্রতিনিয়তই আমরা নিজেদের সৃষ্টিশীলতা, দক্ষতাকে শাণিত করার প্রয়াস চালাচ্ছি। 

বণিক বার্তা মিডিয়া আউটলেট হিসেবে শুরু থেকে তারুণ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। পেশাদার সাংবাদিকতা করার স্বপ্ন দেখা অনেক তরুণ-তরুণী এ হাউজে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তাদের কাজ শেখা, সৃষ্টিশীলতার বিকাশের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে বণিক বার্তা সবসময় উদার। 

চতুর্দশ বর্ষে পদার্পণ করার এই দিনে বণিক বার্তার সব পাঠক, লেখক, এজেন্ট, হকার ও শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতা না থাকলে আমাদের এ অর্জন সম্ভব হতো না। পাঠকের সমর্থন আমাদের সুসাংবাদিকতার সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের সব পাঠককে আন্তরিক ধন্যবাদ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫