সৃষ্টিশীলতায় বাধা হয়ে উঠছে কি ‘ব্যক্তিত্ব অধিকার’

প্রকাশ: জুন ০৬, ২০২৪

ফিচার ডেস্ক

অমিতাভ বচ্চন ও অনিল কাপুরের পর এবার আদালতের দ্বারস্থ হলেন বলিউডের জনপ্রিয় তারকা জ্যাকি শ্রফ। নিজের ব্যক্তিত্ব অধিকারের সংরক্ষণ চান তিনি। নিশ্চয়তা চান তার নাম, আচরণ ও ব্যক্তিগত বিষয়াবলি যেন কেউ নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে না পারে। ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়ে শ্রফ ‘ভিদু’ ও কাপুর ‘ঝাকাস’ নামেও অভিহিত হতেন। তারা সে নামের ওপরও একক কর্তৃত্ব চান। তিনজনের প্রতিই অনুকূলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্ট। তবে এ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া অন্য একটা দিকে আঙুল তোলে। বলিউড অভিনেতারা ‘ব্যক্তিগত অধিকার’ সুরক্ষা ও অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। 

অভিনেতাদের এমন অবস্থান তাদের বিরুদ্ধেও যায়, যারা প্যারোডি ও অনুকরণ করে। আদালত সিদ্ধান্ত দিলে কপিল শর্মা শোয়ের জন্যও প্যারোডি করতে অমিতাভ বচ্চনের অনুমতি লাগবে। অনুকরণ করা যাবে না তার চলাফেরার ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর কিংবা পোশাক পরার ধরন। কিন্তু অনেক বিশ্লেষকই বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন। তাদের মতে, অভিনেতারা এককভাবে অভিনেতা নন। তাদের সিনেমার কারণেই তারা ভক্তদের ঘরোয়া বিষয়ে পরিণত হয়েছেন। অভিনেতার জন্মও মূলত একটা সম্মিলিত প্রয়াস। পেছনে রয়েছে পরিচালক, লেখক, মেকআপ ম্যান থেকে শুরু করে অনেক হাত। উদাহরণস্বরূপ, অমিতাভের সেরা ডায়ালগগুলো তিনি নিজে লেখেননি। অনিল কাপুর ঝাকাস শব্দের প্রথম উচ্চারণ করেন রাজিব রায়ের ১৯৮৫ সালের সিনেমা ‘যুদ্ধ’তে। মুম্বাইয়ের পরিচিত শব্দ ঝাকাস। আমির খানের ‘রঙ্গিলা’ ও ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ সিনেমায়ও দেখা যায় শব্দটি। ভক্তদের কারণেই তারকারা তারকা। কোনো ভক্ত যখন তারকাদের অনুকরণ করে তখন তা হাস্যকর হলেও তাতে আবেগ থাকে, হেয়করণ প্রচেষ্টা নয়। 

ব্যক্তিত্ব অধিকার মূলত এক ধরনের গোপনীয়তা অধিকার। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য নানা রকম আইন আছে। জনপ্রিয় চরিত্র হিসেবে কেউ তার ব্যক্তিত্বের কিছু বিষয়ের অপব্যবহার নিয়ে সরব হতেই পারে, কিন্তু তার সীমারেখা কেমন হবে? কিছু প্রশ্ন এর মধ্যেই উঠছে, তাহলে কি অভিনেতাদের ক্লিপ নিয়ে প্যারোডিও করা যাবে না? যদি কেউ কোনো অভিনেতার কিছু ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করে, তাহলে সে আইনের রোষানলে পড়বে? অথচ দুনিয়ার যে কেউ কোনো সিনেমার কোনো দৃষ্ট বা ডায়ালগকে প্যারোডি করার ব্যাপারে স্বাধীন। এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যেই পরে। এখানেই ঘটছে সংঘাত। একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের অধিকার যেন আরেক জন মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করতে দাঁড়াচ্ছে। 

যখন কোনো অভিনেতা সিনেমা করে, তখন সেখানকার অধিকার প্রযোজক পান। প্রযোজক আবার সে ছবিকে উন্মুক্ত করে দেন সবার জন্য। দর্শকরা সেখানে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে নানাভাবে। চলচ্চিত্র একটা সামগ্রিক প্রচেষ্টা। ফলে বিষয়টি এখনো যথেষ্ট জটিল। কারণ যে তথ্য জনপরিসরে প্রকাশ করে দেয়া ও ব্যবহার করা হয়েছে, তাকে ঠিক কতটুকু মাত্রায় ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে ফেলা যেতে পারে। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি শিল্প বিপ্লব পরবর্তী কনসেপ্ট। দুনিয়া এখন পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের যুগে। হাতের নাগালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সময়ে দাঁড়িয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির। 

বিশ্লেষকরা মনে করেন, জনপ্রিয় অভিনেতা ও তারকাদের মনে রাখা উচিত তাদের এতদূর আসার পথে ভক্তদের ভূমিকা রয়েছে। দক্ষিণ ভারতে এখনো কোনো সিনেমা বা সিনেমার অভিনেতার জনপ্রিয়তার পেছনে ফ্যান অ্যাসোসিয়েশন একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। ফ্যান ক্লাবের মধ্য দিয়েই অভিনেতারা তার ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, প্রচারণা চালান ও নিজেকে আরো এগিয়ে নেন। তবে বিষয়টা এখনো যথেষ্ট জটিল। আর প্রশ্নটা কেবল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই সীমাবদ্ধ নয়। হলিউডের লেখকদের আন্দোলনেও এ প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল।

সূত্র: স্ক্রল ডটইন


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫