কুশিং সিনড্রোম

কুশিং ডিজিজ কী? প্রতিরোধে করণীয়

প্রকাশ: জুন ০৩, ২০২৪

ডা. মারুফা মোস্তারী

কুশিং ডিজিজ হলো একটি হরমোনাল ব্যাধি। অনেকেই কুশিং সিনড্রোমের সঙ্গে কুশিং ডিজিজকে মিলিয়ে ফেলতে পারেন। উপসর্গগুলোয় সাদৃশ্য থাকলেও রোগ দুটোর মধ্যে রয়েছে কিছু পার্থক্য। প্রধান পার্থক্য হলো কুশিং সিনড্রোম যেকোনো কর্টিসোল তারতম্যের জন্য হতে পারে। অন্যদিকে কুশিং ডিজিজের একমাত্র কারণ হলো পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমারের সৃষ্টি।

কুশিং ডিজিজ কী?

পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন মানবদেহে কর্টিসোল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কারণে পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার জন্ম নিলে অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোনের নিঃসরণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। ফলে এ অতিরিক্ত অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে কর্টিসোল নিঃসরণ করতে উদ্দীপ্ত করে। কর্টিসোল হলো গ্লুকোকর্টিকয়েড শ্রেণীভুক্ত একটি স্ট্রেস হরমোন। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত এ হরমোনের প্রধান কাজ স্ট্রেস লেভেল নিয়ন্ত্রণ করা। এ হরমোন দিনে সর্বোচ্চ এবং রাতে সর্বনিম্ন নিঃসৃত হয়ে ঘুমের চক্র ও রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। কিন্তু পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমারের কারণে কর্টিসোল নিঃসরণ বেড়ে গেলে তখন ব্যক্তি কুশিং ডিজিজে আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

  ঘন ঘন মন-মেজাজের পরিবর্তন হওয়া

  মেদ বেড়ে যাওয়া

  ঘা শুকাতে সময় নেয়া

  সহজেই ত্বক ছিলে যাওয়া

  ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া

  মাথাব্যথা, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ

  স্মৃতিভ্রম

  অস্থিক্ষয় ও পেশিতে দুর্বলতা

  উচ্চ রক্তচাপ

  ঘন ঘন তৃষ্ণা অনুভব করা এবং মূত্রত্যাগের ইচ্ছা জাগা

রোগ নির্ণয়

রক্ত, মূত্র ও লালা পরীক্ষার মাধ্যমে কুশিং ডিজিজ শনাক্ত করা যায়। সিটি স্ক্যান ও এমআরআই টেস্টের মাধ্যমেও টিউমারের অবস্থান নির্ণয় করে রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব। রোগ নির্ণয়ের আরেকটি পদ্ধতির নাম কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন টেস্ট। এ পরীক্ষায় ব্যক্তির শরীরে সিআরএইচ (কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন) প্রবিষ্ট করে দেখা হয় কর্টিসোল নিঃসৃত হচ্ছে কিনা। যদি কর্টিসোল নিঃসৃত হয় তবে ধরে নেয়া হয় ব্যক্তির কুশিং ডিজিজ আছে।

প্রতিরোধে করণীয়

  • ওষুধ সেবনের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম মেনে চললে কুশিং ডিজিজে আক্রান্ত একজন রোগী অন্যান্য সুস্থ মানুষের মতোই প্রাত্যহিক জীবনযাপন করতে পারে। এগুলো হলো:
  • স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাদ্যগুলো বেশি বেশি খেতে হবে। যেমন বাদাম, অ্যাভোকাডো, নারকেল ও সামুদ্রিক মাছ। এসব খবার কর্টিসোল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
  • কুশিং ডিজিজের কারণে বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এগুলোর মধ্যে সমতা আনতে প্রয়োজন উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য। সবুজ শাকসবজি এবং লো-ফ্যাট মাংস এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
  • ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি করে গ্রহণ করতে হবে। যেমন শিম, সবুজ শাকসবজি, ব্রকলি, ফুলকপি, দই, ছোট মাছ।
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন। হাঁটাহাঁটি, ইয়োগা, সাইকেল চালানো কুশিং ডিজিজের উপসর্গগুলোর প্রকোপ কমাতে সহায়তা করে।
  • মদপান ও ধূমপানসহ অন্যান্য নেশাদ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।
  • লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং সুচিকিৎসা গ্রহণ করে ভালো থাকুন। 

লেখক: কনসালট্যান্ট (এন্ডোক্রাইনোলজি), 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। 

ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, অন্যান্য হরমোন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫