সংবাদ সম্মেলনে খামারিদের অভিযোগ

ঘুস ছাড়া মেলে না পশুর চিকিৎসা

প্রকাশ: জুন ০২, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন অভিযোগ করেছেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক খামারিবান্ধব নন। তিনি খামারিদের কোনো সহযোগিতা করছেন না। সময় ঘুস ছাড়া পশুর চিকিৎসা মেলে না বলেও অভিযোগ করা হয়।

গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন। কোরবানিতে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ, ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা গুঁড়ো দুধের শুল্ক বাড়ানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মো. ইমরানের হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি আলী আজম শিবলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম নাজীব উল্লাহ, আলী আজম রহমান শিবলী, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী প্রমুখ।

জামাল হোসেন নামে এক প্রান্তিক খামারি বলেন, ‘আমি ডিজির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনদিন পর দেখা করার জন্য সময় দেন। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।

মোহাম্মদপুরের আদাবরের খামারি রাশিদা বেগম জানান, তার ২০টি গাভীর মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারকে ফোন দিলে ১০ হাজার টাকা চায়। একদিন পর খামারবাড়ি থেকে ডাক্তার গেছে। তিনি বলেন, ‘গরু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০-১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করে। বাধ্য হয়ে হাজার টাকা দেয়া হয়। ডাক্তারের সামনেই দুটি গাভী মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনো রিপোর্ট দেয়নি। আমি এখন নিঃস্ব।

বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেলে করে আসত, তাদের ২০০-৩০০ টাকা দিলেই হতো। বর্তমানে ১৫ হাজার পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। এসব ঘুস ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

গুঁড়ো দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন দুধের প্রয়োজন।

তবে উৎপাদন হচ্ছে কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার টন। পুষ্টির চাহিদা দেশের দুগ্ধখামারের মাধ্যমেই সম্ভব। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও বেশকিছু বাধার কারণে দুধের উৎপাদন বাড়ছে না। এসব বাধা দূর করলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আমরা মনে করি, দুধ উৎপাদনের প্রধান বাধা আমদানীকৃত দুধ। আমদানি করা গুঁড়ো দুধ আমাদের সাংঘাতিক ক্ষতি করছে। এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণের কাছাকাছি বস্তা আকারে বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামক গুঁড়ো দুধ এনে নতুন মোড়কে বাজারজাত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা ঘটে। গুঁড়ো দুধ আমদানির মাধ্যমে দেশের দুগ্ধ শিল্প এক ধরনের বাধার মুখে পড়েছে।

চোরাই পথে গরু আসছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে ইমরান হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালন-পালন বেড়ে যায়। সেটাই এখন বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। তবু ঈদুল আজহা সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত মিয়ানমার সীমান্ত গলিয়ে ঢুকছে গরু-মহিষ। কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে অন্য বছরের চেয়ে বেশি পশু ঢুকছে এবার। কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনো প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে আনা হচ্ছে গরু। চোরাপথে আসা এসব পশু বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে, রীতিমতো সীমান্ত এলাকায় হাট বসিয়ে। এসব হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে পশু।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫