বড় হচ্ছে উডেন লেকারের বাজার

পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য নির্ধারণে নেই কোনো নজরদারি

প্রকাশ: জুন ০২, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সময় কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের সৌন্দর্যবর্ধন স্থায়িত্ব বাড়াতে বার্নিশের প্রচলন ছিল। কালের বিবর্তনে এতে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে বার্নিশের পরিবর্তে আসবাবপত্রে আকর্ষণীয় ফিনিশিং আনতে বিশেষ এক ধরনের রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা উডেন লেকার নামে পরিচিত। দেশের আসবাবপত্রের বাজার প্রসারের সুবাদে দিন দিন উড লেকারের বাজারও বড় হচ্ছে। তবে এসব পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সরকারি নজরদারি নেই বললেই চলে। এতে ক্রেতার স্বার্থ লঙ্ঘিত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

দেশে বর্তমানে আসবাবপত্রের বাজারের আকার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার। খাতে কাজ করছে ১০০টিরও বেশি ব্র্যান্ড। এর বাইরে নন-ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে আছে বাজারের প্রায় ৬৫ শতাংশ, যাদের পণ্যের দাম বেশ কম। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ৪০ হাজারেরও বেশি ছোট মাঝারি আকারের কোম্পানি নন-ব্র্যান্ডের আসবাবপত্র উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।

আসবাবপত্রের বাজারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উড কোটিং খাতের বাজারও। উড কোটিং খাত উডেন লেকার অন্যান্য আনুষঙ্গিক কোটিং সরবরাহ করে থাকে। লেকার বা বার্নিশের বাজারের আকার পুরো আসবাবপত্রের বাজারের প্রায় ১০ শতাংশের সমান হবে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ কনটেইনার উড লেকার বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও বাজারের উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। তবে বিদেশ থেকে উড লেকার আমদানির ক্ষেত্রে যথাযথ নজরদারির অভাবে মিথ্যা তথ্য কোড ব্যবহার করে পণ্য আমদানির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনাও ঘটছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে এর সত্যতাও পেয়েছেন।

দেশের বাজারে বিদ্যমান ব্র্যান্ডগুলো বার্নিশ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য হয় বাইরে থেকে আমদানি করছে, না হয় স্থানীয় বাজার থেকেই কিনছে। দেশের বাজারে বহুজাতিক রঙ উৎপাদক বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ ইনোভা ব্র্যান্ডের উড কোটিং বিক্রি করছে। দেশে ইতালির সায়েরলাক ব্র্যান্ডের উডেন লেকার বাজারজাত করছে জেএটি হোল্ডিংস নামে শ্রীলংকার একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ইনকেম, ইন্টারকোটিং মাল্টিকোটের মতো ব্র্যান্ডগুলোও এখানে ব্যবসা করছে। এর বাইরে ডিলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মেডোস, রেইনলাক, জেক্যাম, অ্যাপ্লাইড, কারপলি, নেটজা, বিসকোট প্রোলাক্স ব্র্যান্ডের পণ্যও পাওয়া যায়।

দেশের মানুষের ক্রয়সক্ষমতা বিবেচনায় নন-ব্র্যান্ডের কম দামি আসবাবপত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নন-ব্র্যান্ডের আসবাবপত্রের বড় বাজার গড়ে উঠেছে। মূলত আসবাবপত্রের দাম কম রাখতে গিয়ে এক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে নিম্নমানের রাসায়নিকের মাধ্যমে তৈরি করা উড লেকার ব্যবহৃত হচ্ছে। আসবাবপত্রের দাম কম রাখতে গিয়ে এক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে উড লেকারের মান। হার্ডেনার, সিলার, থিনার টপ কোটসহ আরো বেশকিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে অ্যালকাইড রেজিন প্রাইমারি ফর্ম হিসেবে এগুলো কম শুল্কে আমদানি করে দেশের বাজারে ফিনিশড গুড হিসেবে উড লেকার নামে বিক্রি করা হচ্ছে। নিম্নমানের এসব পণ্যের কারণে আসবাবপত্র শিল্পে শ্রমিকদের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। পাশাপাশি এসব পণ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো মূল্য না থাকার কারণে ক্রেতাদের স্বার্থও লঙ্ঘিত হচ্ছে।

স্থানীয় উডেন লেকার ব্র্যান্ডগুলোর পণ্যের গায়ে খুচরা মূল্য তালিকা ছাড়া পণ্য বিক্রি, উৎপাদকের বিবরণ উপাদানের বিবরণের তথ্য না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়ে বিএসইটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, উড লেকারের বিষয়ে বাধ্যতামূলক কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই। কারণে পণ্যের গায়ে খুচরা মূল্য দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা বলছেন স্ট্যান্ডার্ডটির পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মেট্রোলজি) প্রকৌশলী মো. নুরুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড থাকলে সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা মান যাচাই বাধ্যতামূলকভাবে খুচরা মূল্য দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি। তবে স্ট্যান্ডার্ড না থাকলে তা নিশ্চিত করা কঠিন। অভিযোগের বিষয়গুলো আমরা যাচাই করে দেখব।

যথাযথ চালান ভ্যাট চালান ছাড়াই পণ্য বিক্রি এবং কাঁচামাল হিসেবে কম শুল্কে পণ্য নিয়ে এসে ফিনিশড গুডস হিসেবে বেশি দামে উডেন লেকার বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ডেপুটি কমিশনার একেএম খায়রুল বাশার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ অনুসারে, সলভেন্টের ক্ষেত্রে ওয়েট ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে সেটিকে লেকার হিসেবে গণ্য করা যায়। কিন্তু ৫০ শতাংশের কম হলে সেটি সংজ্ঞা অনুসারে প্রাইমারি ফর্ম হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যালকাইড রেজিন প্রাইমারি ফর্ম হিসেবে আমদানি করে এর সঙ্গে থিনার যোগ করে সেটি বাজারজাত করছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫