মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় শেষ গতকাল

টিকিট ছাড়াই বিমানবন্দরে কয়েকশ কর্মীর অপেক্ষা

প্রকাশ: জুন ০১, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন করে বাংলাদেশের যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অনুমোদন পেয়েছেন, গতকালই ছিল তাদের সে দেশে প্রবেশের শেষ দিন। কিন্তু ভিসা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেলেও উড়োজাহাজের টিকিট পাননি কয়েকশ কর্মী। ফলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকেও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হতে পারেননি তারা।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু ২১ মে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও মন্ত্রণালয় আরো ১ হাজার ১১২ জনকে অনুমোদন দেয়। সে হিসাবে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশী মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মালয়েশিয়া গেছেন ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আরো ১ হাজার ৫০০ জন মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা। সে হিসাবে অনুমোদন পেয়েও ৩১ হাজার ৭০১ জনের মালয়েশিয়া যাওয়া হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভিসা ও কাগজপত্র সরবরাহ করলেও উড়োজাহাজের টিকিট দেয়নি। যদিও টিকিট দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে। বিমানবন্দরে ডেকে অনেক এজেন্সি তাদের হয়রানিও করেছে।

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য গতকাল শেষ দিন থাকায় বিমানবন্দরে সকাল থেকেই কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও এসব যাত্রীর অনেকে উড়োজাহাজের টিকিট পাননি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শুক্রবার সর্বশেষ ফ্লাইটে ২৭১ জন যাত্রী যেতে পারবেন।

বিমানবন্দরে অপেক্ষারত যাত্রীদের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা সময়সীমা শেষ হওয়ার বিষয়টি এক মাস আগে থেকেই জানত। কিন্তু এটা নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি বা অন্য যারা সাপ্লায়ার, তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন বিমান বাংলাদেশ প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় তিন-চারটা ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

জানা গেছে, কর্মীদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এয়ার কম্বোডিয়ার একটা এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় একটি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। গতকাল সেটার অনুমতিও দেয়া হয়েছে। টিকিট সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে বিমানের হজ ফ্লাইট চলছে। এ কারণে মালয়েশিয়ায় অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

টিকিটের জন্য বিমানবন্দরে কয়েকশ কর্মীর অপেক্ষার ঘটনাকে অযৌক্তিক বলছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)। সংগঠনটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টায় একটি ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে গেছে। আরো দুটি বিশেষ ফ্লাইট যাবে। আজ (গতকাল) মোট সাতটি ফ্লাইট মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে তিনটি বিশেষ ফ্লাইট। যাদের কাছে টিকিট আছে, তাদের সবাই আজ মালয়েশিয়ায় পৌঁছতে পারবে। সেখানে কারা আছে, কারা নেই, সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়। আমাদের দেখতে হবে উড়োজাহাজের টিকিট কর্মীদের কাছে আছে কিনা। কোনো কর্মীর সঙ্গে যদি প্রতারণা হয়, আমরা তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা নিশ্চিত করব, কোনো শ্রমিক যেন প্রতারণার শিকার না হন।’

কর্মীদের নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় পৌঁছাতে এরই মধ্যে বিমান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে বায়রা। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বায়রা কাজ করছে বলে জানান সংগঠনটির শীর্ষ এ কর্মকর্তা।

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য গতকাল বরাদ্দকৃত ১০টিসহ মোট ১২টি ফ্লাইট ছিল। এসব ফ্লাইটে প্রায় দেড় হাজার কর্মী যাওয়ার কথা। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য এক সপ্তাহ ধরে বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার কর্মী অবস্থান করছেন। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো উড়োজাহাজের টিকিট দেয়ার আশ্বাসে তাদের নিয়ে এসেছে। অথচ এসব কর্মীর অনেকেই টিকিট পাননি।

প্রায় এক সপ্তাহ আগে বিমানবন্দরের পাশে একটি হোটেলে ওঠেন বগুড়ার আসাদুল ইসলাম মিঠু। তিনি বলেন, ‘রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ছয়দিন আগে আমাকে ডেকে এনেছে। আমাদের ভিসা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবকিছু দিলেও টিকিট দেয়নি। টিকিট না পাওয়ায় আমরা প্রতিদিন বিমানবন্দরে সকাল থেকে রাত অবধি বসে থাকছি। টিকিটে সিন্ডিকেট হওয়ায় আজ আমাদের এ ভোগান্তি।’

একই অভিযোগ চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ওহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘‌রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করলেও উড়োজাহাজের টিকিটের জন্য টাকা দাবি করে। টাকা পরিশোধের পরও গত পাঁচদিনেও ওই এজেন্সি টিকিট দিতে পারেনি। যদিও টিকিটের সংকট দেখিয়ে কয়েক দফায় ১ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।’

ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে উড়োজাহাজের টিকিট মূল্য ৩০ হাজার টাকার কিছু বেশি। কিন্তু কর্মীদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫