আইএলওর প্রতিবেদন

বেকারত্ব হ্রাসে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে নারী-পুরুষ বৈষম্য

প্রকাশ: জুন ০১, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম অন্তরায় বেকারত্ব। শ্রমবাজারের লৈঙ্গিক বৈষম্য এ সংকটে বরাবরই নতুন মাত্রা যোগ করে আসছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী বেকারত্বের হার ২০২৩ সালের তুলনায় কিছুটা কমবে। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য এ সময় অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ৫ শতাংশ বেকারত্বের তুলনায় চলতি বছর কিছুটা কমে দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেকারত্বের পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএলও। তবে সাম্প্রতিক সংশোধিত পূর্বাভাসে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে।

মূলত চীন, ভারত ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোর শ্রমবাজারকে লক্ষ্য করে পূর্বাভাস সংশোধন করেছে সংস্থাটি। এর পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে যাওয়া প্রবৃদ্ধি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও শক্তিশালী শ্রমবাজার কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএফএম) গত জানুয়ারিতে চলতি বছরের জন্য ৩ দশমিক ১ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও এপ্রিলে সংশোধন করে ৩ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করেছে।

আইএলও জানিয়েছে, স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ তুলনামূলক উন্নত শ্রমবাজারের পূর্বাভাস দিচ্ছে। তবে কিছু বিষয় এ পরিস্থিতিকে মধ্যমেয়াদে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে সীমাবদ্ধ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রত্যাশিত আর্থিক ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ের অনিশ্চয়তা।

তবে বিশ্লেষণে অনুমান করা হচ্ছে, বেকারত্ব কমার এ ধারা ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে। ওই সময়ও এ হার হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

তুলনামূলক ইতিবাচক পূর্বাভাস সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার চলমান ধারাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে আইএলওর প্রতিবেদনে। যার অন্যতম প্রভাবক হলো শ্রমবাজারে নারী ও পুরুষের কাজপ্রাপ্তিতে বৈষম্য। সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট হাউংবো বলেন, ‘এ প্রতিবেদন বলছে, আমরা এখনো কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছি। বৈশ্বিক বৈষম্য দূর করতে আমাদের চেষ্টা সত্ত্বেও শ্রমবাজারে কিছু অসাম্য রয়েছে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এটি দৃশ্যমান।’

তিনি আরো বলেন, ‘শ্রমবাজারে টেকসই পুনরুদ্ধার অর্জন করতে হলে এতে সবার প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের কর্মীদের চাহিদা বিবেচনা করে আমাদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির পক্ষে কাজ করতে হবে।’

আইএলওর প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, শ্রমবাজারে প্রবেশে ইচ্ছুক অথচ কাজে নেই—২০২৪ সালে এমন ব্যক্তির সংখ্যা হবে ৪০ কোটি ২০ লাখ। বেকার হিসেবে পরিসংখ্যানে থাকা ১৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এ সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়া নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় সুযোগের প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারবেন না এমন নারীর সংখ্যাও বাড়বে। এসব দেশে সুযোগ না থাকায় শ্রমবাজার থেকে দূরে থাকা নারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২২ দশমিক ৮ শতাংশ, বিপরীতে পুরুষ হবে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। উচ্চ আয়ের দেশেও কর্মসংস্থানে ইচ্ছুক অথচ বেকার এমন নারী ও পুরুষে বৈষম্য দেখা যাবে। ৯ দশমিক ৭ শতাংশ নারীর বিপরীতে পুরুষের হার হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ কর্মক্ষম নারী কর্মসংস্থানে যুক্ত থাকবেন, বিপরীতে পুরুষ ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। এছাড়া নারী ও পুরুষের আয়ের মাঝে প্রভেদ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষের ১ ডলারের বিপরীতে নারীরা আয় করবেন ৭৩ সেন্ট, অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশে ৪৪ সেন্ট।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ পার্থক্যের পেছনে পারিবারিক দায়িত্ব একটি কারণ। অবৈতনিক কাজ বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের লৈঙ্গিক ব্যবধান তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে।

দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে গিলবার্ট হাউংবো। তিনি বলেন, ‘আমাদের নীতি ও প্রতিষ্ঠানের মূলে অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে সামনে রাখতে হবে। যদি তা না করি, তবে আমরা শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হব।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫