ঘূর্ণিঝড় রেমাল: ১১১টি হরিণসহ সুন্দরবনে মৃত প্রাণীর সংখ্যা বেড়ে ১১৬

প্রকাশ: মে ৩১, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অধিক উচ্চতার জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৬টিতে। শুক্রবার (৩১ মে) বিকাল পর্যন্ত বন থেকে ১১টি হরিণ এবং ৪টি বন্য শুকরের মৃতদেহ এবং একটি অজগর উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বনের কটকা, কচিখালী, করমজল, পক্ষীর চর, ডিমের চর, শেলার চর, নারিকেল বাড়িয়া ও নীলকমল থেকে মৃত প্রাণীগুলো উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি ১৮টি হরিণ অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বনে ছেড়ে দিয়েছে বন বিভাগ।

তবে সুন্দরবন বিভাগ এখনো পর্যন্ত জানাতে পারেনি রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে বন বিভাগের সদস্যরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি করছেন।

বন বিভাগ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে এবার ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সুন্দরবন। স্বাভাবিক সময়ে ২৪ ঘণ্টায় দুইবার ভাটা এবং দুইবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় বনের একটি অংশ। কিন্তু এবারই প্রথম ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে থেকে পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় বনে কোনো ভাটা হয়নি। অর্থাৎ, এ দীর্ঘ সময় পুরো বন পানিতে তলিয়ে ছিল। আর জোয়ারে পানির উচ্চতা ছিল স্বাভাবিকের চাইতে ৫ থেকে ৬ ফুট, কিছু এলাকায় এর চেয়েও বেশি। সুন্দরবনে দীর্ঘ সময় এত উঁচু জোয়ারের ফলে মঙ্গলবার (২৮ মে) থেকে বন্যপ্রাণীর বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন বন কর্মকর্তারা।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, রেমালের জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বন্যপ্রাণীর। জলোচ্ছ্বাসে লবণপানি বনের মধ্যে আটকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে সুন্দরবনে তল্লাশি করে প্রতিদিন তারা মৃত অবস্থায় হরিণ উদ্ধার করছেন। শুক্রবারও বনের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা ১৫টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হরিণের দেহ অনেকাংশে পচে গেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তারা ১১১টি মৃত হরিণ, চারটি বন্য শুকর এবং একটি অজগর উদ্ধার করেন। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসে নদীতে ভাসতে থাকা জীবিত ১৮টি হরিণ উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়েছে জানান তিনি।

অধিক উচ্চতার জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় সুন্দরবনের ভেতর প্রাণীদের আশ্রয়ের জন্য উঁচু ডিবির পাশাপাশি মিঠাপানি ও খাবারের সংস্থান বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণে একটি প্রকল্পের আওতায় কিছু মাটির কেল্লা নির্মাণ করা হয়েছিল; সে প্রকল্প এখনো চলমান আছে। সুন্দরবনে ১২টি উঁচু কেল্লা রয়েছে।

তবে এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন দুর্যোগ আসছে। তাই এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাণীদের সংরক্ষণে আরো কী কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া যায়, সে বিষয়ে ভাবা হবে।

বন বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, ২০০৭ সালে সিডরের পর সুন্দরবনে ৪০টি হরিণ, ১টি বাঘ ও ১টি তিমির মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৯-এ ঘূর্ণিঝড় আইলার পর তিনটি হরিণ ও ১টি শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হওয়া ঝড়গুলোতে বাঘ, হরিণসহ অন্য কোনো বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয়নি। ২০২১ সালের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে চারটি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

বন বিভাগের তথ্য বলছে, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।

সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫