পাঁচ মাস কেটে গেলেও মতামত দেয়নি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল

ঢাকা-সিলেট রুটে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশ: মে ২৩, ২০২৪

নূর আহমদ I সিলেট

সিলেট-ঢাকা-সিলেট রুটে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নামে নতুন একটি ননস্টপ ট্রেন চালু নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছিল। কিন্তু হঠাৎ যেন থমকে গেছে সব কার্যক্রম। এমনকি ট্রেনটি কবে নাগাদ চালু হতে পারে তাও বলতে পারছে না কেউ। অথচ সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কোরিয়া থেকে নিয়ে আসা দেড় শতাধিক অত্যাধুনিক কোচ আর তিন হাজার সিরিজের নতুন ইঞ্জিন পড়ে আছে চট্টগ্রামে। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মতামতের অপেক্ষায় আছে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেসের ভাগ্য। সেই মতামত কবে মিলতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না কেউ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে একটি আন্তঃনগর বিরতিহীন ট্রেন চালুর ব্যাপারে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সিলেটবাসীর। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও দাবি উত্থাপিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের শেষের দিকে সরকার একটি বিশেষ ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরেরই নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে চালুর জন্য নতুন বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেনের নাম টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ও অর্থনৈতিক কার্যাবলি বাড়ানোর লক্ষ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচিও অনুমোদিত হয়েছে।’

মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্তের পরপরই গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে তিন হাজার সিরিজের নতুন মডেলের ইঞ্জিন সিলেটে নিয়ে আসা হয়। এরপর অত্যাধুনিক ওই ইঞ্জিন দিয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আজমপুর স্টেশন পর্যন্ত ট্রায়াল দেয়া হয়। কথা ছিল ট্রায়ালের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করবে রেলওয়ে। কিন্তু ট্রায়ালের পর প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে কিনা তা রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা বলতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিলেট-ঢাকা-সিলেট রুটে নতুন ননস্টপ ট্রেন টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস চালু করতে আমরা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মতামতের অপেক্ষায় রয়েছি। যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস চালুর বিষয়ে তাদের মতামত দেবে। তাদের মতামত পাওয়ার পরই কেবল পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া যাবে। টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নিয়ে আপাতত এর বেশি তথ্য নেই আমার কাছে। তবে এটা নিশ্চিত যে সিলেট-ঢাকা রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস চালু হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে পত্র দেয়ার পর ঢাকা-সিলেট ঢাকা রুটে নতুন আন্তঃনগর বিরতিহীন ট্রেন চালুর লক্ষ্যে তোড়জোড় শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেসের কোচ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১৮টি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কথা ছিল, ননস্টপ আন্তঃনগর ট্রেনটি যাত্রাপথে শুধু ঢাকা বিমানবন্দর ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে বিরতি করবে। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে বেলা ৩টায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে। একইভাবে বিকাল ৫টায় সিলেট থেকে ছেড়ে রাত ১১টায় ঢাকায় পৌঁছবে। ট্রেনের মোট আসনসংখ্যা ৮২৪। ট্রেনটিতে দুটি খাবার গাড়ি, একটি পাওয়ার কার, তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি ও শোভন চেয়ার সাতটি কোচের সমন্বয়ে ১৮/৩৬ লোড দ্বারা গঠন করতে রেলওয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের কোচগুলোর মধ্যে এগুলোই সবচেয়ে উন্নতমানের।

একটি সূত্র বলছে, সিলেট-ঢাকা রুটের জন্য অপেক্ষায় থাকা বিরতিহীন ওই ট্রেনটি এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে সিলেট-ঢাকা রুটের বিরতিহীন ট্রেন নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তারাও চুপ হয়ে গেছেন। কবে সেটি চালু হতে পারে এ বিষয়ে কেউই কিছু বলছেন না।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক সুশীল কুমার হালদার, প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা ও চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তাদের কেউই তা রিসিভ করেননি।

তবে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নামের একটি বিরতিহীন ট্রেন চালু হচ্ছে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু কী কারণে এটি চালু হয়নি তা আর শুনিনি। এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র এখনো আমাদের হাতে আসেনি।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫