চাহিদার সঙ্গে দামও বেড়েছে মিরকাদিমের ধবল গরুর

প্রকাশ: মে ২৩, ২০২৪

শুভ ঘোষ I মুন্সিগঞ্জ

প্রতি বছরই ঈদুল আজহায় মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের গরুর চাহিদা থাকে বেশি। বিশেষ করে পুরান ঢাকার মানুষের কাছে বেশ প্রিয় ধবধবে সাদা বিশেষ জাতের এ গরু। প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করায় এবার ঈদেও চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মিরকাদিমের গরু। তবে চাহিদার পাশাপাশি এবার দামও বেশি। কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, একসময় মিরকাদিমের প্রতিটি ঘরেই বিশেষ জাতের এ গরু লালন-পালন করা হতো। এখানে ছিল তেল ও ধান-চালের মিল। সস্তায় খৈল, ভুসি, খুদ ও কুঁড়া পাওয়া যেত। এখন মিল থাকলেও গো খাদ্যের দাম বেশি। উৎপাদন খরচ বাড়ায় এবার ধবল গরুর দামও বেশি।

স্থানীয় খামারিরা জানান, হারানো ঐতিহ্যের পাশাপাশি সুদিন ফিরছে তাদের। তবে ভেজালযুক্ত খাবার ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজা করার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে অনেকটাই হারিয়েছে মিরকাদিমের ঐতিহ্য। কিছু প্রান্তিক খামারি ছোট পরিসরে আগলে রেখেছে পূর্বপুরুষের শৌখিন পেশা। উৎকৃষ্ট মানের চাল, ডাল, গরু উৎপাদনের জন্য মিরকাদিম এখনো প্রসিদ্ধ। রাজধানীতে পুরান ঢাকার হাটে কোরবানি ঈদের প্রধান আকর্ষণ থাকে মিরকাদিমের ধবল গরু। কথিত আছে শুধু মিরকাদিমের ধবল গরু বিক্রির জন্য পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের গনি মিয়ার হাটের প্রচলন শুরু হয়েছিল। একসময় মিরকাদিমের দুই শতাধিক খামারি কয়েক হাজার গরু পালন করে সেই হাটে নিয়ে যেতেন বিক্রির জন্য। মিরকাদিম বুট্টি গরু ও তাজা গাভীর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এখানে পাওয়া যায় নেপালি, মন্ডি, হাঁসা, পশ্চিমা ও সিন্ধি জাতের গরু। বিশেষ পালন কৌশলের কারণে এসব গরুর মাংস সুস্বাদু হয়। কয়েক বছর ধরে পুরান ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা ঈদের কয়েক মাস আগেই মিরকাদিমে চলে আসেন গরু কিনতে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু পছন্দ করে কেনেন। গৃহস্থদেরই ঈদ পর্যন্ত গরু পালনের দায়িত্ব ও খরচ দিয়ে আসেন।

পুরান ঢাকার ঝুলনবাড়ির শামসুদ্দিন দেওয়ান এসেছেন গরু কিনতে। বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে পছন্দমতো কিনেছেন চারটি ধবল গরু। তিনি বলেন, ‘আমাদের পছন্দের শীর্ষে থাকে মিরকাদিমের ধবল গরু। প্রায় ৩৫ বছর ধরে মিরকাদিমের গরু দিয়ে কোরবানি করছি। তবে গত বছর ছয়টি গরুর যে দাম পড়েছিল, এ বছর সেই দামে চারটি গরু কিনতে পেরেছি। এবার চারটি ধবল গরুর দাম পড়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগে মিরকাদিমে এলে অসংখ্য ধবল গরুর দেখা পাওয়া যেত। এখন আর আগের মতো গরু চোখে পড়ে না।’

ব্রিটিশ শাসনামলে মিরকাদিমে ছিল নদীবন্দর। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু বদলে গেলেও নাম হারায়নি মিরকাদিম। কোরবানির আগে এ অঞ্চলের বিশেষ জাতের গরুর কারণে দেশজুড়ে সুনাম রয়েছে। শৌখিন মানুষ, যারা দর্শনীয় গরু কোরবানি দেন, ঈদের সময় তাদের আনাগোনায় এ অঞ্চল সরব হয়ে ওঠে। 

মুন্সিগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি বছর মিরকাদিমে ১৩টি খামারে চার শতাধিক ধবল গরু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। যেসব খামারির পশু পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে এ বছর আমরা তাদের সহযোগিতার পাশাপাশি বিনামূল্যে পশুর চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। এছাড়া অসংখ্য খামারিকে স্বল্প সুদে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে মিরকাদিমের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরে আসছে। আগের তুলনায় বেড়েছে খামারির সংখ্যা।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫