সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিনের রাফাহতে তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে তাহলে তারা কী করবেন?’ জবাবে বাইডেন বলেন, ‘তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।’ বলাবাহুল্য মার্কিন-ইসরায়েল জোটের মূল ভিত্তি অস্ত্র সহায়তা। বাইডেনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের এ বক্তব্যের মাধ্যমে চার দশকে প্রথমবারের মতো ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, তথা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক কৌশলগত সম্পর্কে চিড় দেখা গেল।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে এ ধরনের চিড় বিরল। এ চার দশকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থায়ই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং সব পরিস্থিতিতে তাদের সহযোগিতা করেছে।
বিবিসির একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় আরো বড় বেসামরিক হতাহতের আশঙ্কা এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়ে দেশী ও বিদেশী নানামুখী চাপের মুখোমুখি রয়েছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক বিশ্লেষক এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী জ্যেষ্ঠ রাজনীতি বিশ্লেষক অ্যারন ডেভিড মিলার বলছেন, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বর্তমান বিরোধী দল ইসরায়েলপন্থী রিপাবলিকান পার্টির তোপের মুখে রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বাইডেন ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাচ্ছেন না।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই বলেছেন, রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযান করতে যাচ্ছেন তারা। এমনকি যুদ্ধবিরতির আলোচনা সফল হলেও তিনি এ হামলা চালাবেন বলে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
ডেভিড মিলার বলছেন, এটা স্পষ্ট ইসরায়েলের রাফাহ আক্রমণের সময় যত ঘনিয়ে এসেছে, বিষয়টি নিয়ে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি ততটাই পরিবর্তন হয়েছে। ওয়াশিংটন বারবার নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করেছে, তারা যেন রাফাহ আক্রমণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। কেননা বাইডেনের ধারণা, রাফাহ আক্রমণ যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করবে। এমনকি হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তির পথকেও পিচ্ছিল করে দিতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইসরায়েলকে যে পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা করেছে, তার বড় একটি অংশ এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের কাছে মজুদ রয়েছে বলে জানান মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক আর্টিলারিম্যান কর্নেল জো বুকিনো। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক কমান্ড সেন্টকমের সাবেক এ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে থাকা অস্ত্র রাফাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের যে চালান বন্ধ করে দিয়েছে, তা ওই হামলায় প্রয়োজনও পড়বে না।’
এদিকে গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন করে থাকতে পারে। ফলে তাদের অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। তবে ওই প্রতিবেদনে কোনো সিদ্ধান্তমূলক উপসংহারে পৌঁছায়নি বাইডেন প্রশাসন। এর অর্থ দেশটিতে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে বাধা নেই।