বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। ফলে তারা সহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে তাদের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
গরমে শিশুদের যেসব রোগ হতে পারে
গরমকালে শিশুরা যেসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
ভাইরাস জ্বর
গরমে শিশুরা ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এ জ্বর হলে শিশুর মাথাব্যথা, ক্লান্তি, খাবারে অরুচি, শরীরে ব্যথা, অস্থিরতা ও ঘুম কম হয়। ভাইরাসের তীব্রতা ভিন্ন হয় বলে শিশু তিনদিনেও সুস্থ হয়ে যেতে পারে, আবার ৭-১০ দিনও লাগতে পারে।
করণীয়
শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করান ও পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ান। নির্দিষ্ট সময় পর পর শরীর মুছে দিন। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আছে এমন ঘরে শিশুকে রাখুন। জ্বর তিনদিনের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সর্দি-কাশি
গরমে ঘামে ভেজা জামাকাপড় পরে থাকা, দীর্ঘক্ষণ গোসল করা, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করা—এসব কারণে শিশুরা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
করণীয়
গরমে সর্দি-কাশি থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে হালকা সুতির জামা পরাতে হবে। এতে শিশু কম ঘামবে। চুলের গোড়া যেন ঘামে ভিজে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ডায়রিয়া
গরমকালে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায়, ফলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে।
করণীয়
প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী বাচ্চাকে পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন পান করান। পাশাপাশি ফলের রস ও ডাবের পানি পান করাতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে। পায়খানার সঙ্গে রক্ত বের হলে এবং শরীরে জ্বর থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
টাইফয়েড
দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবার টাইফয়েডের জীবাণু ছড়ায়। গরমকালে শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
করণীয়
শিশু টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রধানত, অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি শিশুকে তরল খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে।
ত্বকের সমস্যা
শিশুদের ত্বক সংবেদনশীল। তাপমাত্রার তারতম্য তাদের ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত গরমে তাদের ত্বকে র্যাশ, চুলকানি, ঘামাচি, ফোড়া, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় শিশুর ত্বকের আলাদা যত্ন নিতে হবে।
করণীয়
অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম পানি উভয়ই শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাচ্চাদের গোসলে সহনীয় তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘাম জমে যেন ত্বকের ক্ষতি না হয় তাই শরীরের বিভিন্ন ভাঁজের জায়গাগুলো ভালোভাবে মুছে দিন। বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন। ত্বক সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করান।
হিট স্ট্রোক
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, চোখে ঝাপসা দেখে এবং শরীরে খিঁচুনি দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
করণীয়
শিশুর হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত তাকে ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে যান। জামাকাপড় খুলে দিন। পাখা দিয়ে বাতাস করুন বা ফ্যান ছেড়ে দিন। শিশুর জ্ঞান থাকলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
শিশুর গ্রীষ্মকালীন রোগ প্রতিরোধে হতে হবে সচেতন
গ্রীষ্মকালে শিশুরা যেসব রোগে আক্রান্ত হয়, একটু বাড়তি যত্ন ও সচেতনতার মাধ্যমে সেসব রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য গরমে—
- শিশুকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন।
- নিরাপদ পানি পান করান।
- শিশুর সুষম খাবার নিশ্চিত করুন।
- আলো-বাতাসপূর্ণ ঘরে শিশুকে রাখুন।
- আরামদায়ক পোশাক পরান।
- শিশুর দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি ও ফলমূল রাখুন।
- শিশুর ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- শিশুর শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন।
লেখক: কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা