ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী

প্রথমে দেখলেই ভাবত ‘আরে ও তো পাহাড় থেকে এসেছে’

প্রকাশ: এপ্রিল ২২, ২০২৪

ফিচার প্রতিবেদক

প্রীতি তঞ্চঙ্গ্যার বেড়ে ওঠা বান্দরবানে। লুম্বিনী ফেলোস প্রোগ্রামে কিছুদিন আগে গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক শেষ করেছেন বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সমন্বয়ে। বর্তমানে কর্মরত ইউনিসেফে। তবে শুরু থেকে এ যাত্রা এতেটা সহজ ছিল না তার জন্য।

একটি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ দুজন শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট বছরের দুটি সেমিস্টার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। যারা”লুম্বিনি ফেলো” হয়েছিল তাদের লুম্বিনি লিমিটেডে ইন্টার্নশিপ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রীতি ইউনিসেফের অ্যাডোলেসেন্স নিউট্রিশন ফেসিলেটর হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি লুম্বিনি লিমিটেডে ইন্টার্নশিপ করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইএমকে সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি বেশ ভালো নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ বেতারের বান্দরবান আঞ্চলিক শাখায় অ্যানাউন্সার হিসেবে কাজ করেন। 

পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের ইউএনডিপির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইউএনডিপির কোলাবোরেশনে ‘‌ভালোবাসার চিহ্ন’ নামক একটি গান রিলিজ করেন। ইউএনডিপির আরো একটি প্রজেক্ট যার মূল লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য বিমোচন, ডিজিটাল খিচুড়ি চ্যালেঞ্জ ২০২২। প্রীতি সেখানেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বান্দরবানে প্রথম স্থান অধিকার করে একটি ছয় মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন সফলভাবে শেষ করেছেন। ব্র্যাক এনজিওর পিআর লিডার হিসেবে ২০২২ সালে খণ্ডকালীন চাকরিও করেছেন। এছাড়া লোকাল এনজিও ‘‌গ্রীন হিল’ এবং ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের সঙ্গেও কাজ করেছেন প্রীতি। এ তো গেলে প্রীতির সফলতার গল্পগাথা। কিন্তু এত কিছু অর্জনের পথ কি সহজ ছিল? মোটেই না।

শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে প্রীতি বলেন, ‘‌মেয়েদের জন্য এগিয়ে যাওয়াটা সব ক্ষেত্রে আমি মনে করি অনেক চ্যালেঞ্জিং। আর যদি সেই মেয়েটি আদিবাসী হয় তাহলে প্রতিবন্ধকতা আরো দ্বিগুণ। যখনই বান্দরবান থেকে কিছুটা শহরের দিকে পা বাড়িয়েছি, তখন থেকেই বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছি। যখন কোনো কম্পিটিশনে যেতাম, মানুষ প্রথমে দেখলেই ভাবত, আরে ও তো পাহাড় থেকে এসেছে! জিজ্ঞেস করতে শুরু করত খাদ্যাভ্যাস, ভাষাসহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যেগুলো মাঝে মাঝে অস্বস্তিকর ও অপমানজনক আমার জন্য।’

প্রীতি আরো বলেন, ‘‌শুরু থেকে বিষয়গুলোর সম্মুখীন হতে হতে এখন আর গায়ে লাগে না। এত দূর এসেও, শিক্ষিত, মার্জিত ও রুচিশীল সমাজের মানুষদের মাঝে আদিবাসীদের প্রতি সূক্ষ্ম যে বৈষম্য আমি দেখেছি, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। এমনকি শুধু বাঙালিদের থেকেই যে এ রকম বৈষম্যের শিকার হয়েছি বিষয়টি সে রকম না। পাহাড়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ আরো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের থেকেও বৈষম্যের শিকার হয়েছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলেই হয়তো এসব বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। স্কুলজীবন থেকে শুরু করে পেশাজীবন পর্যন্ত যতটুকু এসেছি, সব জায়গায় কমবেশি কটূক্তি, হয়রানি ও বাধার শিকার হয়েছি।’

তবে এসব বাধা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রীতি সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন তার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহে এবং নিজের আত্মবিশ্বাসে। তার পরিবার তাকে কখনই পিছিয়ে যেতে দেয়নি। সব রকমের সাপোর্ট তিনি তার পরিবার থেকে পেয়েছেন। বড় হয়েছেন যৌথ পরিবারে। কিন্তু যৌথ পরিবারে থেকেও সবার যতটা সমর্থন ও ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, বান্দরবানের আর কোনো মেয়ে হয়তো সেটি পায়নি বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এজন্য তিনি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবতীও মনে করেন। আরো সব পরিবার যেন এভাবে এগিয়ে আসে এটাই তার চাওয়া। 

প্রীতি বলেন, ‘‌আমার ছোটবেলা থেকেই ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনগুলোর মধ্যে কোনো একটায় কাজ করার অনেক ইচ্ছে ছিল। এখন সেটি অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। তবে আমার আরো একটি স্বপ্ন হলো, একদিন আদিবাসীদের প্রতি থাকা সব বৈষম্যের বিনাশ হবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫