এশিয়ার মুদ্রা শক্তিশালী করতে সমন্বিত পদক্ষেপের ইঙ্গিত

প্রকাশ: এপ্রিল ১৯, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের বিপরীতে চলতি বছরে এশিয়ার বেশির ভাগ মুদ্রাই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এভাবে পরিস্থিতির শিগগিরই উন্নতি হবে না। বরং পূর্বাভাস পরিস্থিতির আরো অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধান অর্থনীতিগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক বিবৃতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। খবর নিক্কেই এশিয়া।

বিরল এক সতর্ক বার্তায় গতকাল যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ব্যবস্থার নীতিনির্ধারকরা ইয়েন ও ওনের পতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর এ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

সেখানে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে জাপানের ইয়েন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের সাম্প্রতিক দ্রুত অবমূল্যায়নের বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বিদ্যমান জি-২০ প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশগুলো ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবে।

টোকিও ও সিউলের উদ্বেগের প্রতি ওয়াশিংটনের সম্মতি মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপের কাছাকাছি একটি পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন কিছু বিশ্লেষক। ইউবিএস সুমি ট্রাস্ট ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের জাপান অংশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা দাইজু আওকি বলেন, ‘বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে সরকারি হস্তক্ষেপের ঝুঁকি স্পষ্টতই বেড়েছে।’

বর্তমান অবস্থায় হস্তক্ষেপের পূর্বাভাস না দিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু জাপান সরকারের একক হস্তক্ষেপ ইয়েনের ওপর অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলবে না। তবে যদি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারে, এ প্রভাব অনেক বড় হবে।’

এদিকে যৌথ বিবৃতি ও হস্তক্ষেপ বিষয়ে সতর্কতার পর গতকাল বিনিময় হারে উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। এদিন বাজারে ১ ডলারের বিনিময়ে ১৫৩ ইয়েন পাওয়া যায়। এর আগে মঙ্গলবার ছিল ১৫৪ দশমিক ৭৮ ইয়েন, যা ৩৪ বছরের মধে সর্বনিম্ন বিনিময় হার। তার পরও ডলারের বিপরীতে বেশি প্রভাবিত এশিয়ান মুদ্রাগুলোর একটি ইয়েন। কুইক ফ্যাক্টসেট অনুসারে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি বছরে ডলারের কাছে ৮ শতাংশের বেশি বিনিময় হার হারিয়েছে ইয়েন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের বিনিময় হার প্রায় ৬ শতাংশ এবং তাইওয়ান ডলার ও ইন্দোনেশীয় রুপিয়া উভয়ই প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।

তবে ডলারের বিপরীতে এশিয়ার মুদ্রার শক্তিশালী অবস্থানের ওপর দেশটির নীতি সুদহারবিষয়ক সিদ্ধান্ত প্রভাব রাখবে। সম্প্রতি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সুদহার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর অর্থ হলো এশিয়ার মুদ্রার তুলনায় ডলার আরো অনেক দিন শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সম্প্রতি নীতি সুদহারের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৪ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা জাপানের দশমিক ১ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ২ দশমিক ৫ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে অনেক বেশি।

বিনিয়োগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্কোর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কর্মকর্তা ডেভিড চাও বলেন, ‘এখানে বড় বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি আবার ত্বরান্বিত হয়েছে। শ্রমবাজারের পুনরায় সংকোচন ও মূল্যসংকোচন কিছু ঝুঁকি নিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

১ ডলারের বিপরীতে ১৫৪ ইয়েনের বিনিময় হার সম্ভাব্য সরকারি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসছে। কারণ এটি গত বছরের প্রাথমিক পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক দুর্বল অবস্থা দেখাচ্ছে।

মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের বিনিময় হার দেড় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মিডডে ট্রেডিংয়ে ১ ডলারের বিপরীতে ১ হাজার ৪০০ ওনে ছুঁয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা ওইদিন মৌখিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও ব্যাংক অব কোরিয়ার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা বৈদেশিক মুদ্রার হারের গতিবিধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অতিরিক্ত অস্থিরতা আমাদের অর্থনীতির জন্য কাম্য নয়।’

এদিকে মঙ্গলবার চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১ ডলারের বিনিময়ে ইন্দোনেশিয়ার ১৬ হাজার ২০০ রুপিয়ার হওয়ার পর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থানীয় মুদ্রাকে সমর্থন করার পদক্ষেপ নেয়। প্রতিবেশী মালয়েশিয়ারও মুদ্রার বিনিময় হার পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ১ ডলারের বিপরীতে ৪ দশমিক ৭৯৬৫ রিঙ্গিত বিনিময় হার ছিল ২৫ বছরের সর্বনিম্ন। মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা নিজস্ব মুদ্রার দুর্বলতা কাটানোর জন্য চেষ্টা করছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আর্থিক বাজার সুশৃঙ্খল রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে গতকাল ভারতে ১ ডলারের বিপরীতে় ৮৩ দশমিক ৭৩৯ রুপি বিনিময় হার ছিল রেকর্ড সর্বনিম্ন। গত বছর ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রাকে শক্তিশালী করতে হস্তক্ষেপ করেছিল।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫