জলবায়ু পরিবর্তন

আরো ক্ষয়িষ্ণু হবে দরিদ্র দেশের অর্থনীতি

প্রকাশ: এপ্রিল ১৯, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তন এখন সারা বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ। গত কয়েক বছরে তাপমাত্রা, বন্যা দাবানলের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় একের পর এক রেকর্ড তৈরি করেছে। যার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে। শুধু ২৬ বছরে বৈশ্বিক আয় কমেছে ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোর ক্ষতি বিশেষভাব লক্ষণীয়। কারণ তারা সহজে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে না। পরিস্থিতি বর্তমান পর্যায়ে থাকলে দরিদ্রগুলোর অর্থনীতি আরো ক্ষয়িষ্ণু হতে পারে বলে সম্প্রতি বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে। খবর সিএনএন।

চলমান জলবায়ু পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও আগামী শতাব্দী নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রভাব প্রতি মানুষকে অর্থনৈতিক বোঝার মাধ্যমে চুকাতে হবে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সরকারগুলো জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিয়ে থাকলেও স্বল্পমেয়াদে সবার জন্য আর্থিক কষ্ট অনিবার্য।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন জার্মানির পটসডাম ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের দুই গবেষক ম্যাক্সিমিলিয়ান কোৎজ লিওনি বেঞ্জ। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কোনোভাবেই এড়ানো সম্ভব হবে না। কারণ একটি প্রভাবকে অন্যটির থেকে আলাদা করে দেখা প্রায় অসম্ভব। তবে মুহূর্তে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেয়া গেলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দীর্ঘস্থয়ী ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

গবেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রভাব সবার জন্য একই হবে না। দরিদ্র দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী ২৫ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি আয় কমতে পারে। এর মধ্যে ২০৪৯ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্য উত্তর আফ্রিকায় কমতে পারে ২২ দশমিক শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় হার হতে পারে ২২ দশমিক শতাংশ। সাব-সাহারান আফ্রিকা দক্ষিণ আমেরিকায় কমবে যথাক্রমে দশমিক ২০ দশমিক ১৯ দশমিক শতাংশ। সবচেয়ে কম হ্রাস পাবে মধ্য এশিয়া রাশিয়ায় দশমিক শতাংশ। সব মিলিয়ে আয় কমার বৈশ্বিক গড় হতে পারে ১৮ দশমিক শতাংশ।

বড় দেশগুলোয় অর্থনৈতিক বিপর্যয় তুলনামূলক কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এর প্রভাব যে একেবারেই পড়বে না, তা নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত করবে দেশটির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যয় বাড়বে। দেশটিতে ২০২৪ সালে জন্ম নেয়া প্রতিটি ব্যক্তির জীবদ্দশায় আবাসন ব্যয় লাখ ২৫ হাজার ডলার বাড়তে পাবে। এছাড়া জ্বালানি, পরিবহন স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য আবশ্যিক খরচ কয়েক দশকের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত বাড়তে পারে।

যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৪৯ সালের আগ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রত্যাশিত। তবে এটি প্রশমিত করার প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে সুফল এনে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পরিবেশ গবেষক নোয়া ডিফেনবো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির আকার ভিন্ন ভিন্ন হবে। চরম আবহাওয়ায় সৃষ্ট সম্পদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রা কৃষিকাজকে প্রভাবিত করতে পারে। সেই সঙ্গে মানুষের চিন্তা তৎপরতা দুই ক্ষেত্রেই প্রভাবিত হতে পারে।

তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিকে গবেষকরা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ক্ষতি বেশি হয়েছে। এর মধ্যে সংকট সমাধানের চেষ্টার খরচ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির খরচ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব প্রায় ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ক্ষতি কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে জানান গবেষকরা। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ‘দাবানল প্রতিরোধে বৈদ্যুতিক গ্রিড বন্ধ করার মতো কৌশলগুলো দীর্ঘমেয়াদে অর্থ সাশ্রয় করতে পারে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫