সয়াবিন তেল

অনুমোদনের আগেই পাইকারিতে দাম বেড়েছে লিটারে ৮ টাকা

প্রকাশ: এপ্রিল ১৭, ২০২৪

সুজিত সাহা I চট্টগ্রাম ব্যুরো

রমজান মাসে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলে ৫ শতাংশ শুল্কছাড় দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপর লিটারপ্রতি সয়াবিনের দাম ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় আমদানিকারক কোম্পানিগুলো। কিন্তু শুল্কছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ায় লিটারপ্রতি দাম আবার ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তারা। যদিও তাদের ঘোষণার আগেই গত কয়েকদিনে দেশের পাইকারি বাজারে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি প্রায় ৮ টাকা বেড়ে গেছে।

পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের মধ্যে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে মণে (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ২৬০-৩০০ টাকা। এর মধ্যে গতকালই প্রতি মণে বেড়ে যায় ৩০ টাকা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বর্তমানে এক মণ সয়াবিন কেনাবেচা হচ্ছে ৫ হাজার ৬৮০ থেকে ৫ হাজার ৭৫০ টাকার মধ্যে। কয়েক দিন আগেও মণপ্রতি দাম ছিল ৫ হাজার ৪২০ থেকে ৫ হাজার ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৮ টাকা।  

গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১৬ এপ্রিল (গতকাল) থেকে প্রতি লিটার সয়াবিন ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হবে ১৭৩ টাকায়। পাঁচ লিটার বিক্রি হবে ৮৪৫ টাকায়। কিন্তু গতকাল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গণমাধ্যমকে জানান, সয়াবিন আগের দামে ফেরত যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মিলাররা কত দামে ভোজ্যতেল আমদানি করেন, তা ট্যারিফ কমিশন পর্যালোচনা করছে। পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। 

এ বিষয়ে ভোজ্যতেল আমদানি, পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়নি। ভ্যাট প্রত্যাহারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় (১৫ এপ্রিল) শুল্ক যুক্ত করে খুচরা ও পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মিল মালিকদের সঙ্গে রোববার বৈঠক করবেন। দাম বাড়ানোর বিষয়টি আপাতত কার্যকর না হলেও মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ 

বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনে (পিংক শিট) দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম ক্রমেই কমছে। ২০২২ সালের শেষার্ধে অপরিশোধিত সয়াবিনের দর রেকর্ড ২ হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করে। ওই বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে প্রতি টনের গড় দাম ছিল ১ হাজার ১০৫ ডলার। এরপর গত জানুয়ারিতে ৯৭১ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৯১২ ডলার এবং মার্চে দাঁড়ায় ৯৬৫ ডলারে। আন্তর্জাতিক বাজারে কমতির দিকে থাকলেও দেশের বাজারে গত কয়েক মাসে সয়াবিনের দাম কমায়নি আমদানিকারকরা। কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে বিলম্বসহ নানা যুক্তি দেখিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও দেশের ব্যাংকগুলোয় ডলারের মূল্য কিছুটা কমেছে। ডলারের দাম কমেছে কার্ব মার্কেটেও। 

সয়াবিনের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর আজ (মঙ্গলবার) সয়াবিনের দাম মণে ৩০ টাকা বেড়েছে। যদিও ঈদের কয়েকদিন থেকেই সয়াবিনসহ পাম অয়েলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কারণ মিল মালিকরা জানতেন, ঈদের পর ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে। সে জন্য ধারাবাহিকভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকের ঘোষণা আসার পর দাম তেমন একটা বাড়েনি।’

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে ২০২০ সালের মে মাসে দেশের বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৩৫-১৪০ টাকা। পরের বছর একই মাসে ছিল ১৩৫-১৪৫ টাকা। তবে ২০২২ সালের শুরুতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০-১৬০ টাকায়। আর ২০২৩ সালের শুরুতে এ দর ছিল ১৮৭-১৯০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬৩ টাকায়।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫