সেমিনারে বক্তারা

বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের শ্বাসরোধ করেছে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা

প্রকাশ: এপ্রিল ০৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় উন্নয়ন হলেও বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক এবং ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নতি হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের পথকে শ্বাসরোধ করেছে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা।

গতকাল রাজধানী ঢাকার মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে সানেম ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ আয়োজনে ‘‌দক্ষিণ এশিয়ায় কি কর্মসংস্থানহীন উন্নয়ন হচ্ছে?’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। বিশ্বব্যাংকের এপ্রিল ২০২৪-এর ‘‌সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ। আলোচকদের মধ্যে ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা এবং বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন।

ড. ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথে বাধা এবং এইগুলো দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তুলে ধরেন। তিনি জানান, অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। তবে এটা ভারতের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং সরকারি খাতের ওপর অতিনির্ভরতার কারণে সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় অনেক কম।

নাজুক রিজার্ভ নতুন করে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপের সম্মুখীন করতে পারে বলে মনে করেন ড. ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ। তিনি বলেন, ‘‌যখন মুদ্রা সংকট দেখা দেয়, প্রথম এক থেকে দুই মাসে বিনিময় হার ৫০ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়। এই অবমূল্যায়নের ফলে ঋণ নেয়ার খরচ এবং প্রকৃত আয়ের ওপর স্থায়ী চাপ সৃষ্টি হয় যা মুদ্রা সংকটের তাৎক্ষণিক প্রভাবকে নির্দেশ করে।’

তার বক্তব্যের আরেকটি দিক হলো, ফার্মগুলোর তুলনায় বসতবাড়ির জলবায়ু অভিযোজন কৌশল কম কার্যকর। কৃষকরা কৃষি খাত থেকে অকৃষিতে অভিযোজন কৌশল হিসেবে অভিবাসন করছে। কিন্তু অ-কৃষি খাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না।

ড. সায়েমা হক বিদিশা কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকের ওপর জোর দেন। ড. ফ্রানজিস্কার এক প্রশ্নের উত্তরে ড. বিদিশা কর্ম ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণের অনুপাতের বৈষম্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, গ্রামীণ এলাকায় নারীদের কর্ম ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও শহুরে নারীদের কর্ম ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। শিল্পে রূপান্তরিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণের একটি ক্রমহ্রাসমান চিত্র তুলে ধরেন। এজন্য তিনি স্বয়ংক্রিয়তা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তৈরি পোশাক শিল্পের এ প্রবণতাকে তিনি ডিফেমিনাইজেশন বলে অভিহিত করেন। ড. বিদিশা ব্যক্তিগত বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টিকারী সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর রূপরেখা তুলে ধরার মাধ্যমে সবাইকে শুধু সংখ্যা বাড়ানোর পরিবর্তে গুণগত বৃদ্ধির দিকে পরিবর্তনের আহ্বান জানান। বার্নার্ড হ্যাভেন বিগত এক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশগামী শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বাংলাদেশের জন্য তিনটি প্রধান অগ্রাধিকার তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গুণগত মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে কর্মশক্তিতে একীভূত করা।

তিনি বলেন, ‘‌মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী, একটি শিশুকে পরিপূর্ণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে বড় করা হলে সে যতটা উৎপাদনশীল হতো, বাংলাদেশের একেকটি শিশু তার চেয়ে ৪৬ শতাংশ কম উৎপাদনশীল হয়।’

ডা. রুবানা হক জানান, ভালো চাকরি এবং তৈরি পোশাক খাতে আপস্কিলিং এবং রিস্কিলিং উদ্যোগের উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি রয়েছে। একই ধরনের সেমিনার, সভা আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ নীতি পরিবর্তন করছে না।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫