বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

জনসংখ্যা অনুপাতে কর্মসংস্থান তৈরিতে পিছিয়ে দক্ষিণ এশিয়া

প্রকাশ: এপ্রিল ০৩, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে পিছিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। ফলে অধিক কর্মী সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া থেকে দূরে রয়েছে অঞ্চলটি। এ পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে দেশগুলোকে বেশকিছু নীতিগত দুর্বলতা দূর করতে হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। খবর রয়টার্স।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে শ্রমবাজারে প্রবেশের উপযোগী জনসংখ্যা বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। দক্ষিণ এশিয়া প্রতি বছর এক কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করলেও জনসংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিসকা ওহনসর্গ বলেন, ‘জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় অর্থনীতিতে যে সুবিধা পাওয়ার কথা দক্ষিণ এশিয়া সেদিক থেকে পিছিয়ে। বিপুল জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া গেলে সেটি ইতিবাচক হতো। কিন্তু বর্তমানে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের হার নিম্নমুখী।’

তিনি আরো বলেন, ‘জনশক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। এটি হাতছাড়া সুযোগের মতো বিষয়। যদি অন্যান্য উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো এ অঞ্চল কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে নিযুক্ত করে, তবে আউটপুট ১৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।’

বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাশা ২০২৫ সালে ৩১ মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এর মধ্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির প্রভাব থাকবে বেশি। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে থাকবে।

কভিড-১৯ মহামারীর পর ভারতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ব্যয় ও নির্মাণ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এশিয়ার দেশটিতে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় অর্থনীতি দুর্বলতা ছিল ও কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতে কর্মসংস্থানের হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রাথমিক তথ্যের বরাতে বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০২৩ সালে ভারতের অর্থনীতি আগের তুলনায় কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। সামগ্রিক হিসেবে ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শ্রমবাজারে প্রবেশের উপযুক্ত জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সেভাবে বাড়েনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের পার্থক্যেও পরিবর্তন এসেছে।

বিশ্বব্যাংক এর প্রতিবেদনে বলেছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বেশকিছু নীতিগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে এমন নীতি, যা উৎপাদনশীল সংস্থাগুলোকে শ্রমিক নিয়োগে উৎসাহিত করবে। এছাড়া শ্রমবাজার ও ভূমি মালিকানাসংক্রান্ত বিধি সংস্কার ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা। চায়না ডেভেলপমেন্ট ফোরামে অংশ নিয়ে গত মাসে তিনি বলেন, ‘দুই দশকে এসব দেশের প্রবৃদ্ধি ৬-৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এ মন্থরতা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। এটা অব্যাহত থাকলে আগামী দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় প্রতি চারজনে তিনজন তরুণ বেকার হয়ে যাবেন।’

এ সময় তিনি জানান, এ সমস্যা নিরসনে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এসব দেশে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চায় সংস্থাটি।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয় বলেও জানান অজয় বাঙ্গা। এ মন্থরতা অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হারানো শতাংশীয় পয়েন্ট ১০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে টেনে নিয়ে গেছে। এ সময় বেড়েছে ঋণের মাত্রা।’

উন্নয়নশীল দেশে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের অভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। কারণ এসব দেশে চাকরির বাজারে প্রবেশে সক্ষম তরুণের সংখ্যা আগামী দশকে ১১০ কোটিতে পৌঁছবে। কিন্তু মাত্র ৩২ কোটি ৫০ লাখের জন্য প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান থাকবে। একে ‘একটি অকল্পনীয় ব্যবধান’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫