রাশিয়া ছেড়ে যাওয়া বিদেশী কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লোকসান ১০৭ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশ: মার্চ ২৯, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা বিশ্ব। ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রুশ সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক বিদেশী কোম্পানি রাশিয়ার লাভজনক বাজার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। এমন সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার বাজার ছেড়ে যাওয়ায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর মোট লোকসানের পরিমাণ ১০৭ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের আগস্টের পর থেকে মোট লোকসান বেড়েছে এক-তৃতীয়াংশ।

রাশিয়া থেকে ব্যবসা ছেড়ে আসার প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। এ সময় নানা ধরনের আর্থিক প্রতিবন্ধকতায় পড়েছিল কোম্পানিগুলো। এ ঝুঁকি ভবিষ্যতে রাশিয়া ছাড়তে চাওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বিদ্যমান থাকবে। সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার ছাড়ার ক্ষেত্রে লোকসানের এ ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের।

এ বিষয়ে ব্যবসায়িক ঝুঁকিসংক্রান্ত পরামর্শক সংস্থা এস-আরএমের হেড অব করপোরেট ইন্টেলিজেন্স ইয়ান ম্যাসি বলেন, ‘যেসব কোম্পানি এখনো রাশিয়ার বাজার ছাড়তে চায়, তারাও সম্ভবত ভবিষ্যতে আরো সমস্যার সম্মুখীন হবে। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ অব্যাহত। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এজন্য আগামীতে কোম্পানিগুলোকে আরো লোকসান সহ্য করতে হবে।’

বিদেশী কোম্পানিগুলো যখন রাশিয়ায় তাদের সম্পদ বা বিনিয়োগ বিক্রি করার চেষ্টা করেছে, তখন রাশিয়া কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ছাড়ের দাবি করছে। এছাড়া বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া আরো কঠিন করেছে রাশিয়া।

চলতি বছর শেল, এইচএসবিসি, পলিমেটাল ও ইয়ানডেক্সের মতো বড় কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় তাদের সম্পদ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। যার মোট মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এদিকে ফরাসি বহুজাতিক খাদ্যপণ্য কোম্পানি ড্যানোন জানায়, তারা ১৩০ কোটি ডলার লোকসানে রাশিয়ার সম্পদ বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে।

এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বিদেশী কোম্পানি রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তবে ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের বিশ্লেষণ অনুসারে, ফরাসি খুচরা বিক্রেতা আউচান ও বেনেটনসহ শতাধিক কোম্পানি এখনো রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে।

যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করেছে। জব্দ করা সম্পদের ওপর অর্জিত সুদ পুনর্বণ্টনের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। এজন্য পশ্চিমা ব্যাংকগুলো সম্ভাব্য আইনি সমস্যাকে বিবেচনায় রেখেছে।

এদিকে রাশিয়া ফোর্টাম, কার্লসবার্গ, ওএমভি ও ইউনিপারের মতো পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন সম্পদের অস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ হিসাব করে জানায়, মস্কো পাল্টা ব্যবস্থা নিলে পশ্চিমারা অন্তত ২৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ ও বিনিয়োগ হারাতে পারে।

তবে রাশিয়ার কঠোর অবস্থান তার নিজের অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। অনেক বহুজাতিক কোম্পানি পুরোপুরিভাবে রাশিয়ার বাজার ছেড়ে চলে গেছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও তারা আর ফিরে নাও আসতে পারে। যার কারণে রাশিয়া ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদন তৈরিতে বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

অবশ্য মন্ডেলেজ, পেপসিকো, ইউনিলিভার, রেকিট ও নেসলের মতো কিছু ভোগ্যপণ্য উৎপাদকরা এখনো রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের যুক্তি, রাশিয়ানরা তাদের পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে রাশিয়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিমা একাধিক সংস্থা নিজ দেশে প্রতিবাদ ও নিন্দার ‍মুখে পড়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫