স্যার আবেদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন

প্রকাশ: মার্চ ২৫, ২০২৪

ফিচার প্রতিবেদক

স্যার ফজলে হাসান আবেদ। একজন ভিশনারি, নির্মোহ স্বপ্নবান, আলোকিত সমাজ গড়ার কারিগর। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধনকারী এক আলোকবর্তিকার নাম স্যার ফজলে হাসান। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ পরিবেশবান্ধব এবং সবুজ ক্যাম্পাস স্যার ফজলের স্বপ্নের একটা বাস্তবায়ন। এ দেশের সাধারণ মানুষ ও তাদের জীবন সংগ্রামই ছিল স্যার ফজলে হাসান আবেদের উন্নয়ন চিন্তার কেন্দ্র। তিনি বিশ্বাস করতেন, গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষাই বদলে দিতে পারে দেশ ও জাতির ভাগ্য। বৈষম্যহীন, দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষিত জাতি গঠনই ছিল তার ধ্যান ও জ্ঞান। উদ্ভাবনী শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে স্যার আবেদ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এমনই দৃঢ় বিশ্বাসে স্যার আবেদ শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন তার দূরদৃষ্টি, কর্ম আর নিবিড় আবেগে।

উন্নত গবেষণা, বিশ্বমানের পাঠদান ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে ২০০১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। স্যার ফজলের দেখানো পথ ধরেই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি আজ দেশের অন্যতম সেরা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মেরুল বাড্ডার এ জায়গায় যখন তিনি নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তখনই তিনি বলেছিলেন এ ক্যাম্পাস হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক ক্যাম্পাস। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রজেক্টে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্বসেরা ডিজাইনার, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারদের অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের সেরা প্রকৌশলী ও চিন্তাবিদদের সঙ্গে নিয়ে এ মহাযজ্ঞের পরিকল্পনা করেন।

আজ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির যে বিশাল ভবন আর পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন উপাদান দেখা যাচ্ছে তা সম্ভব হয়েছে কেবল স্যার ফজলের প্রগতিশীল চিন্তার কারণেই। তিনি চেয়েছিলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই যাতে গর্ব করে বলতে পারে যে আমি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি পরিবারের অংশ। সবুজে ঢাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়, সবুজে ঢাকা একটি স্থাপনা চেয়েছিলেন তিনি। চেয়েছিলেন মানুষকে উদার হওয়ার শিক্ষা দেয় এমন একটি ক্যাম্পাস। যেখানে বুক ভরে শ্বাস নেয়া যায়। এ ক্যাম্পাসকে সবুজ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পৃথিবীর আদলে তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।

ক্যাম্পাসকে ইট-পাথরের ভবনের মতো করে গড়ে তুলতে চাননি তিনি। শিক্ষার্থীরা যাতে প্রকৃতির বুকে বসে শিক্ষালাভ করতে পারে—এমনটিই চেয়েছিলেন তিনি। এমন একটি ইউনিভার্সিটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন যেখানে যুগে যুগে মহতী ও গুণী মানুষ যেভাবে শিক্ষা আর মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতেন সেই ধরনের শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকবে, যেখানে তারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং পরস্পরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারবে।

জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি স্যার ফজলে। ২০১৯ সালে লন্ডনে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তারের কাছ থেকে ক্যান্সারের কথা শোনার পর তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। এরপর বলে উঠলেন, ‘‌আহা! আমি তো ক্যাম্পাসটাকে দেখে যেতে পারব না!’ লন্ডন থেকে ফিরেই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নতুন ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্যার ফজলে। তিনি দেখে যেতে না পারলেও তার স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ ক্যাম্পাস আজ পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। এ সবুজ ক্যাম্পাস আজ শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর। স্যার ফজলের একটি সমৃদ্ধ আগামীর নির্মাণে কাজ করছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। এ ক্যাম্পাস তার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫