বিআইডিএসের সেমিনারে বক্তারা

দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়েছে পিছিয়ে আছে রাজনৈতিকভাবে

প্রকাশ: মার্চ ২৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। আর দুই সংকট একসঙ্গে এলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ অবস্থা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা এগিয়েছে, তবে পিছিয়ে আছে রাজনৈতিকভাবে। দেশে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটেছে। আওয়ামী লীগ এখন ‘‌উইনার টেক অল’ পলিসি গ্রহণ করেছে। এ থেকে দলটি বেরিয়ে আসবে বলেও মানুষ বিশ্বাস করছে না।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ও আগামীর বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ সেমিনার হয় বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে। সেমিনারের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

সেমিনারে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য শেখর দত্ত বলেন, ‘রাজনীতি আর অর্থনীতি যমজ ভাইয়ের মতো। এদের একটি আরেকটির উপযোগী হতে না পারলে ফাটল সৃষ্টি হয়। আর এ ফাটলের সুযোগে ষড়যন্ত্র আসে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭০ সাল থেকে আমরা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছিলাম। পরে ১৯৭৪ সালের বন্যার প্রভাব আমরা সামাল দিতে পারিনি। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা এগিয়ে গেছে, তবে পিছিয়ে আছে রাজনৈতিকভাবে।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ইশতেহার নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও এখন নির্বাচনের পর আমরা এটা নিয়ে আলাপ করছি। দেশে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটেছে। আওয়ামী লীগ এখন “‍উইনার টেক অল” পলিসি গ্রহণ করেছে। এ থেকে দলটি বেরিয়ে আসবে বলেও মানুষ বিশ্বাস করছে না। এমন ব্যবস্থায় ক্রনিক অর্থনীতি সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো অপেশাদার হয়ে যায়।’

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাবে, এদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগ করে, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে না। ফলে সব ধরনের সংস্কার বৃথা হয়ে যাবে। আমাদের সম্পদ কম। আবার যা আছে, তাতেও লিকেজ আছে। তাই সংস্কারে যারা বাধা হতে পারে তাদের ফেলে দিতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির সদস্য। সেমিনারে তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান না পড়লে স্মার্ট বাংলাদেশ গাড় যাবে না। তাই আমরা গ্রামের স্কুলেও বিজ্ঞানাগার তৈরি করছি, যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ জন্মে।’

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘গত তিন বছরে বিদেশী তেল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে গেছে। এর প্রভাবে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ কারণেই নতুন নানা তত্ত্ব দেখা দিচ্ছে। এর সমাধান কোনো আন্তর্জাতিক কাঠামোয় নেই। আমাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে বলে বেড়াচ্ছে, ভর্তুকি কমাও। কিন্তু চিপস তৈরিতে নিজেরা ৪০ হাজার কোটি ডলার ভর্তুকি দিচ্ছে।’ 

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে প্রথম সংসদ অধিবেশনে আমরা আইন করেছি। ঈদের পর এটা পুরোদমে শুরু হবে। তখন এখানে টাকা-পয়সা আসবে। শুনেছি অনেকের কাছেই এ আইন পছন্দ হয়েছে। সারা বিশ্বেই এটা আছে। অনেকেই বলেছিল, আমরা শ্রীলংকা হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা তা হইনি। রবং অনেক বিনিয়োগ আসছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিনিয়োগ আসবে। নতুন একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংক (এনডিবি) সাহায্য করতে প্রস্তুত। অনেকে এগিয়ে আসছে। কাজেই অল্প সময়ে আমরা ভালো অবস্থানে উঠে এসেছি।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গুণগত শিক্ষা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়ানো। চাল উৎপাদনে ভারসাম্য রক্ষা ও রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর চ্যালেঞ্জও আছে।’

সেমিনারের দুই অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয়ে নয়টি প্রবন্ধ ও গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে একটি শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষক ড. বদরুন নেসা আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন। এই ২৮ শতাংশের বেশির ভাগই বিএ পাস করা।

গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. বদরুন নেসা জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী বেতনে চাকরি করছেন। এছাড়া ১৬ শতাংশ আত্মকর্মসংস্থানে আছেন এবং ১৩ শতাংশের বেশি খণ্ডকালীন কাজ করছেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫